মাথাঘোরা এবং প্রাকৃতিক আরোগ্য। মাথাঘোরা শব্দটি দ্বারা মাথাঘোরা অনুভূতিকে বোঝায়। এটি নির্দিষ্ট অবস্থার একটি উপসর্গ। এটি কান, মস্তিষ্ক সমস্যা থেকে হয়।
মাথাঘোরা এবং প্রাকৃতিক আরোগ্য।
মাথাঘোরাঃ
মাথাঘোরা শব্দটি দ্বারা মাথাঘোরা অনুভূতিকে বোঝায়। এটি নির্দিষ্ট অবস্থার একটি উপসর্গ। এটি কান, মস্তিষ্ক, বা সংবেদী স্নায়ুযন্ত্রের সমস্যা থেকে ঘটতে পারে।মাথাঘোরাকে কখনও কখনও উচ্চতাভীতিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি সঠিক নয়। উচ্চতাভীতিকে এক্রোফোবিয়া (acrophobia) নামে পরিচিত হয়।
মাথাঘোরা এবং প্রাকৃতিক আরোগ্য। |
মাথাঘোরা যেকোনো বয়সে ঘটতে পারে, তবে এটি ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে সাধারণ বেশি দেখা দেয়। এটি ৬০ টিরও বেশি মেডিকেল ও মানসিক অবস্থা এবং কিছু ঔষধের কারণেও হতে পারে।
মাথাঘোরা অস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মাথাঘোরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সাথে সংযুক্ত থাকে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা কারণেও মাথাঘোরা হতে পারে, অথবা দৈনিক জীবনের কার্যকারিতায় ব্যক্তির ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে তৈরী হয় বিষন্নতা।
মাথাঘোরার লক্ষণঃ
বার বার মাথার অবস্থানের পরিবর্তনের কারণে প্রায়ই মাথাঘোরা সমস্যা দেখা দেয়।মাথাঘোরার ব্যক্তিরা সাধারণত নিম্নোক্ত অনুভূতির বর্ণনা করেঃ
- সুতা তৈরীর মত চক্রাকারে মাথা ঘুর্নণ (Spinning)
- মাথা কাত হয়ে যাওয়া বা ঝুকে যাওয়া (Tilting)
- মাথা দোলে বা আন্দোলিত হয় (Swaying)
- ভারসাম্যহীন
- মাথা একদিকে টানে
মাথাঘোরার সাথে অন্যান্য যে উপসর্গগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ
- বমিবমি ভাব
- বমি
- চোখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া বা ঝাকুনি (nystagmus)
- মাথা ব্যাথা
- ঘাম
- কানের মধ্যে ঘণ্টা বাজানোর মত শব্দ বা কানে শুনায় ক্ষতি দেখা দিতে পারে
মাথাঘোরার কারণ এবং প্রকারভেদঃ
কারণের উপর নির্ভর করে মাথাঘোরা দুই ধরনের।পার্শ্বিয় বা পেরিফেরাল মাথাঘোরা (Peripheral vertigo) - মাথাঘোরা যখন কানের অভ্যন্তরের ভারসাম্য অঙ্গে ব্যাঘাত ঘটার কারণে হয়।
কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল মাথাঘোরা (Central vertigo) - মাথাঘোরা যখন মস্তিস্কের সেনসরি স্নায়ু পথ অংশে ব্যাঘাত ঘটার কারণে হয়।
পার্শ্বিয় বা পেরিফেরাল মাথাঘোরা (Peripheral vertigo):
পার্শ্বিয় বা পেরিফেরাল মাথাঘোরা অন্তঃকর্ণের সাথে সম্পর্কিত।বিভিন্ন অবস্থা পার্শ্বিয় বা পেরিফেরাল মাথাঘোরা সঙ্গে যুক্ত-
ল্যাবাইরিন্থ প্রদাহ (Labyrinthitis): এটি ভেতরের কানের ভঙ্গুরতা এবং ভেস্টিবুলার স্নায়ুর প্রদাহ, যা শরীরের গতি এবং অবস্থানের এনকোডিংয়ের জন্য দায়ী। এটা সাধারণত একটি ভাইরাল সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয়।
ভেস্টিবুলার স্নায়ুর প্রদাহ (Vestibular neuronitis): এটি ভ্যাসিবুলার স্নায়ু প্রদাহের কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়।
কলেস্টিয়াটমা(Cholesteatoma): সাধারণত পুনরাবৃত্তি সংক্রমণের ফলে মাঝারি কানে চামড়া বৃদ্ধি ঘটে। যদি চামড়া বৃদ্ধি বড় হয়ে যায়, তবে এটি কানের ক্ষতি সাধন করে, যার ফলে শ্রবনশক্তি হ্রাস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাথাঘোরায়।
মেনিয়ের রোগ (Ménière's disease): ভেতরের কানের মধ্যে তরল গঠনের ফলে মাথাঘোরা আক্রমণ হতে পারে। এটি ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষদের বেশি প্রভাবিত করে।
তবে, এটি নিম্নোক্ত কারণেও হতে পারেঃ
- মাথা আঘাত
- মস্তিষ্কের ভেস্টিবুলার রক্তের প্রবাহ অংশে কমে গেলে, যা ভেস্টিবুলার ইস্কেমিয়া (vertebrobasilar ischemia) নামে পরিচিত।
- কানের অস্ত্রোপচার
- দীর্ঘদিন বিছানায় বিশ্রামরত থাকলে
- এছাড়াও ওষুধের বিষাক্ততা এবং সিফিলিস দ্বারা অভ্যন্তরীণ কানের জখম হতে পারে।
কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল মাথাঘোরা (Central vertigo):
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জড়িত সমস্যাগুলির সাথে কেন্দ্রীয় মাথাঘোরা যুক্ত।এটি নিম্নলিখিত অংশের মধ্যে সমস্যার সাথে জড়িতঃ
ব্রেইনস্টেম এবং সেরেবেলাম, যা মস্তিষ্কের অংশ, যা দৃষ্টি ও ভারসাম্য অনুভূতির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া মোকাবেলা করে, যা মস্তিষ্কের অংশ এবং এর থেকে সংবেদী বার্তাগুলি প্রেরণ করে, যা থ্যালামাস নামে পরিচিত।
মাইগ্রেন মাথাঘোরার বড় একটি কারণ। মাইগ্রেন রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের মধ্যে মাথাঘোরা লক্ষণ আছে, এদের ভারসাম্যহীনতা, মাথাঘুর্ণন বা একসাথে দুটি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মাথাঘোরার টেস্ট এবং রোগনির্ণয়ঃ
একজন ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে, এবং জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মাথাঘোরা অনুভূতি নির্ণয় করতে পারেন।সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এর মাধ্যমেও মাথাঘোরার কারণ নির্ণয় করা যায়।
মাথাঘোরার নিজেই নিজের যত্ন নিনঃ
কি কি কারণে মাথাঘোরাতে পারে তার উপর ভিত্তি করে, আপনি নিজে নিজেই মাথাঘোরা এবং প্রাকৃতিক আরোগ্য দিতে পারে। মাথাঘোরা অনুভূতি দূরও করতে পারেন।একজন চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিম্নোক্ত পরামর্শ দিতে পারেনঃ-
- উপসর্গ বা লক্ষণ দূর করতে সহজ ব্যায়াম করবেন।
- আপনার ঘুমানোর সময় মাথা হালকা উচু করে রাখবেন প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক বালিশ ব্যবহার করবেন।
- উচু তাক থেকে কিছু নামানো বা ঘাড় টানা দিয়ে কোন কাজ করা যাবে না।
- মাথা নিচু করে কোন কিছু তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- দৈনিক কার্যক্রমের সময় আপনার মাথা যত্ন সহকারে এবং ধীরে ধীরে সরান।
- মাথাঘোরাকে দূর করে এমন ব্যায়াম করুন, এতে মস্তিষ্কের ব্যবহার হবে উপসর্গগুলিও হ্রাস পাবে।
- ঘুম হতে উঠতে ধীরে একটু সময় নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে হবে।
মাথাঘোরা এবং প্রাকৃতিক আরোগ্য ছাড়াও নিতে পারেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
নিম্নোক্ত আর্টিকেলে মাথাঘোরার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা আলোচনা করা হয়েছে -
মাথাঘোরার সাদৃশ্ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
মাথাঘোরার সাদৃশ্ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।
COMMENTS