এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। এডিনয়েড এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি। এটি টনসিলের উপরে, নাকের পিছনে অবস্থান করে।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
এডিনয়েড (Adenoids):
এডিনয়েড এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি। এটি টনসিলের উপরে, নাকের পিছনে অবস্থান করে। টনসিল এবং গলরসগ্রন্থি আমাদের লসিকানালীর অংশ; তারা আমাদের মুখ এবং নাক দিয়ে আসা জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
শিশুদের এডিনয়েড এবং টনসিলের যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আমরা দেখি তা ন্যাজোফয়ারিংসে (nasopharynx) স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকে তা জীবাণু সংক্রমণ দ্বারা বৃদ্ধি পায়। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে এবং এই সময়েই শিশুরা টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এডিনয়েড সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণে (Puberty) ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। |
গলরসগ্রন্থি বা এডিনয়েড বৃদ্ধির কারণসমূহঃ
- সংক্রমণ
- জন্মগত
- এপস্টাইন বার ভাইরাস
- এলার্জি
- এডিনয়েড সিস্টিক কার্সিনোমা
- ঠান্ডার প্রতি অতিসংবেদনশীলতা
এডিনয়েড রোগের লক্ষণ ও উপসর্গঃ
একুইট বা তীব্র পর্যায়েঃ
- রোগের তীব্র (Acute) পর্যায়ে গলা ব্যথা
- ঢোক গিলতে (Swallowing difficulty) কষ্ট হয়
- শিশু কিছু (Anorexia) খেতে চায় না
- ঢোক গেলার সময় কানের ব্যথা (Earache)
- শরীরের তাপমাত্রার (Body temperature) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে
- জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় কাঁপুনি (Jerking), খিচুনি (Spasm), মাথাব্যথা (Headache) ও সারা শরীরে ব্যথাও থাকে
- লসিকাগ্রন্থির (Lymphatics) প্রদাহের কারণে পেটে ব্যথা (Abdominal pain)
- গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় (Swelling) ও ব্যথা (Pain) থাকে।
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়ঃ
- প্রায় সময় গলা ব্যথা সঙ্গে জ্বর হওয়া
- সর্দি থাকা
- নাক বন্ধ থাকা
- নাকের নিঃসরণ
- মুখে দুর্গন্ধ
- খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি
- গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি (Lymphatics swelling) সব সময় ফুলে থাকে
টনসিল ও এডিনয়েডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির (Large tonsils and adenoids ) জন্য নানা উপসর্গ দেখা দেয়-
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া
- মুখ হা করে ঘুমানো
- দাঁতের অস্বাভাবিক গড়ন
- লম্বাটে মুখমন্ডল ও চ্যাপ্টা বুক
- শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতার (Difficulty breathing) কারণে এসব শিশুর স্বাভাবিক ঘুম হয় না। ঘুমের মধ্যে ছটফট এবং এপাশ-ওপাশ করতে থাকে।
- খেলাধুলায় উৎসাহ থাকে না।
- খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি থাকে, কম খায় এবং খেতে খেতে অনেক সময় বমিও করে দেয়।
- রাতে কাশি হয় (Night coughing) এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহে (Infection) সব সময় ভুগে থাকে।
- আচার-আচরণে অনেক সময় অতি ব্যতিব্যস্ত (Busy), ঝগড়াটে(Quarrelsome) থেকে মনমরা ধরণের হয়ে থাকে।
- দিনের বেলায় তাদের অলসতা (Lazy daytime) ও সকালের দিকে মাথাব্যথা (Morning headache) থাকে।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। |
রোগ নির্ণয়ে করণীয়ঃ
রোগীর রোগ বৃত্তান্ত (Disease history) নেওয়া। নাক, কান, গলা ভালোভাবে পরীক্ষা করা।
রোগের জটিলতাঃ
- পেরিটনসিলার অ্যাবসেস (Peri-tonsilar abscess) বা টনসিলে পুঁজ জমা (Puss formation)।
- দীর্ঘস্থায়ী কানের প্রদাহ (Chronic ear infection) সঙ্গে নাক ও সাইনাসের প্রদাহ (Sinus infection)।
- পালমোনারি হাইপারটেনশন
- এ রোগের মারাত্মক জটিলতায় রয়েছে-বাতজ্বর (Rheumatic fever), হৃদরোগ (Heart disease) ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখ (Chronic kidney disease) ইত্যাদি
- হঠাৎ হৃদযন্ত্রে (Sudden heart attack) ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি চিকিৎসাঃ
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনাঃ
- রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠান্ডা (Cold) খাওয়া পরিহার
- দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা
- স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস
- হাল্কা শরীরচর্চা করতে হবে।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে নিরূপন করে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এপদ্ধতিতে রোগীর লক্ষণ এবং উপসর্গ মুছে ফেলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবার একমাত্র উপায় এটি। হোমিওপ্যাথি উদ্দেশ্য শুধু এডিনয়েড বৃদ্ধি / আক্রান্ত দূর করা নয়,এর অন্তর্নিহিত কারণ এবং ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতাও দূর করা। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিবেচনায় ওষুধ নির্বাচন এবং চিকিৎসার জন্য, রোগীকে অবশ্যই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন (BHMS) হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য সহায়ক যা নিম্নলিখিত ওষুধ আছে:
Agraphis - সন্তানেরা মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেয় এবং টনসিল বৃদ্ধি থাকে। এডিনয়েড বৃদ্ধির জন্য বধিরতা থাকে।
Tuberculinum - পরিবারের যক্ষ্মা ইতিহাসের সঙ্গে সন্তান দুর্বল থাকে।
Calcaria carb - মেদবহুল শিশু, যার মাথা রাতে পর্যাপ্ত ঘামে এবং খুব সহজেই ঠান্ডা লাগে।
এডিনয়েড বা গলরসগ্রন্থি বৃদ্ধি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
Calcaria phos - টনসিল বৃদ্ধিযুক্ত শিশু, দীর্ঘস্থায়ী (Chronic) এডিনয়েড বৃদ্ধি।
Sulphur - যে শিশুরা গোসল করতে ভয় পায় এবং নাকের পলিপাসের (Polyps) সঙ্গে সবসময় ক্ষুধার্ত থাকে।
Calcaria Iod - টনসিল বৃদ্ধি এবং কাশির সঙ্গে এডিনয়েড।
Baryta Iod - ঘন ঘন টনসিল গ্রন্থির প্রদাহের সঙ্গে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু।
Merc Iod - এটি আরেকটি ওষুধ যা এডিনয়েড চিকিত্সার জন্য মনে রাখা উচিত।
Cistus Can - গণ্ডমালা - রোগগ্রস্ত হয়ে ফুলে ও পূঁজ তৈরী হয়। উপজিহ্বা বা আলজিহ্বার পিছনে জ্বালা-পোড়া ও শুস্ক থাকে, যা উপশমের জন্য বার বার লালা গিলতে হয়।
COMMENTS