তরমুজের ভেষজগুণঃ একটি চমৎকার স্বাদের মৌসুমী ফলের নাম তরমুজ। অনেকে আবার তরবুজও বলে থাকেন। পানিতে ভরা থাকে বলেই হয়ত এই ফলটির ইংরেজি নাম W...
একটি চমৎকার স্বাদের মৌসুমী ফলের নাম তরমুজ। অনেকে আবার তরবুজও বলে থাকেন। পানিতে ভরা থাকে বলেই হয়ত এই ফলটির ইংরেজি নাম Water melon । তরমুজ বা তরবুজ কোন দেশের আদি ফল বা এর আদি উৎস নিয়ে অনেক গবেষণা আছে । কোন কোন গবেষনায় দেখা গেছে যে, তরমুজ দক্ষিণ আফ্রিকার ফল। তবে বর্তমানে তরমুজ বাংলাদেশের নিজস্ব মৌসুমী ফলে পরিণত হয়ে গেছে।
তরমুজের বেশি ফলন হয় বা তরমুজ ভাল জন্মে চরাঞ্চল এবং নদী সংলগ্ন চরের বেলে মাটি বা পলি মাটিতে। তরমুজ ভাল উৎপাদনের জন্য শুকনো আবহাওয়া এবং প্রচুর রোদ প্রয়োজন হয়।
Medicinal benefits of watermelon |
বাংলাদেশের সর্বত্রই তরমুজ পাওয়া যায়। তবে তরমুজের বেশি চাষ হয় চট্টগ্রাম, কমিল্লা, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও যশোর জেলায়। এক সময় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা তরমুজের জন্য বিখ্যাত ছিল। দেশজুড়ে পতেঙ্গার তরমুজের আলাদা একটা খ্যাতি ছিল।
তরমুজের বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তন্মধ্যে হাল্কা সবুজ ও সাদা দাগ বিশিষ্ট ও গাঢ় সবুজ রং এর তরমুজ প্রধান এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ায় এই দু প্রকারের তরমুজের চাষাবাদও বেশি হয়।
তরমুজ বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফল। ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসে বাজারে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ পাওয়া যায়।
দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মজাদার এই ফলটির ঔষধিগুণ সম্বন্ধে আমরা অনেকে জানি না। তরমুজের বহুপ্রকার ঔষধিগুণের মধ্যে কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
(ক) তরমুজে প্রচুর পরিমাণ লাইকোপিন পাওয়া যায়। লাইকোপিন হচ্ছে একটি লাল বর্ণ, হরিদ্রাবর্ণ রঞ্জক বিষেশ, যা টমেটো এবং বীজশূণ্য ক্ষুদ্র রসালো ফলে এবং অন্যান্য ফলে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে , মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী লাইকোপিন গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফল তরমুজে টমেটোর চাইতে চল্লিশগুণ বেশী।
লাইকোপিনের কাজ কি?
মানুষের শরীরে ফ্রি-র্যাডিকেলস বা এক প্রকার মুক্ত রাসায়নিক কণা উৎপন্ন হয়, যা ত্বকের উজ্জ্বল্য নষ্ট করে দেয় এবং শরীরের চামড়ায় ভাঁজ ফেলে দেয়। ফলে অল্প বয়সেই মানুষকে বৃদ্ধ মনে হয়। এই মুক্ত রাসায়নিক কণা মানব শরীরে বিভিন্ন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ তৈরীতে প্রভাব বিস্তার করে। লাইকোপিন নামক এই রঞ্জক মানব শরীরে নানাভাবে উৎপন্ন ফ্রি-র্যাডিকেলস বা মুক্ত রাসায়নিক কণাসমূহ ধবংস করে দেয়। ফলে নানাবিধ শারীরিক জটিলতা ও রোগ থেকে মানুষ রক্ষা পায়।
লাইকোপিন বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। লাইকোপিন রক্ত থেকে প্রস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন কমিয়ে দেয়। ফলে প্রস্টেট বৃদ্ধি ও প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৬০% প্রস্টেট ক্যান্সার লাইকোপিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়া লাইকোপিন ফুসফুস, পাকস্থলি, বৃহদন্ত্র, মুখগহবর, রেক্টাম, শরীরের চামড়াসহ বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিলতার প্রায় ৮০ শতাংশই লাইকোপিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব। ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা গবেষনার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, লাইকোপিন হৃদপিন্ডের রক্তবাহী নালীতে চর্বি জমতে দেয় না, এর ফলে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা কমে যায়। চোখের অন্ধত্ব নিবারণেও লাইকোপিন গুরুত্বপূর্ণ।
মহিলাদের জন্য তরমুজ আরোও বেশী গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। তরমুজের উপাদান লাইকোপিন মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা বিশেষ করে খিঁচুনি থেকে রক্ষা করে থাকে। যাদের শরীরের রক্তে লাইকোপিনের পরিমাণ বেশি তারা অন্যদের চাইতে অধিক স্বাচ্ছন্দ ও নিরোগ জীবন যাপন করে থাকেন।
(খ) লাইকোপিন ছাড়াও তরমুজে প্রচুর পরিমাণ পানি, শর্করা, প্রটিন, কার্বোহাইড্রেড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ইত্যাদি পাওয়া যায়। অত্যাধিক শারীরিক পরিশ্রমজনিত কারণে যারা ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েন, তাদের জন্য তরমুজের শরবত খুবই উপকারী। তরমুজের শরবত পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটায়।
(গ) ঘন ঘন পিপাসা রোধে তরমুজ অধিক কার্যকরী। যাদের ঘন ঘন পিপাসা হয়, বিশেষ করে হৃদরোগ ঘঠিত কারণে ঘন-ঘন ও অধিক পি পাসা নিবারণে কিছু দিন তরমুজের শরবত পান করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
(ঘ) তরমুজের শরবত টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতে এবং জ্বর পরবর্তী অস্থিরতা ও ক্লান্তি দূর করে।
(ঙ) যারা রোদে কাজ করেন, বিভিন্ন কাজে রোদে সময় কাটায়, যাদের রোদের তাপজনিত পানিশুন্যতা হয়, তা পূরণ করতে তরমুজের শরবত বেশ ফলপ্রদ।
(চ) পুরুষের বন্ধ্যাত্ব ঘুচাতে এবং কামভাব তৈরীতে তরমুজের বীজ বেশ উপকারী। তরমুজের বীজ খোসা ছাড়িয়ে বেটে পানির সাথে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে পান করলে শুক্রবৃদ্ধি হয় এবং কামভাব জাগে।
Darun
ধন্যবাদ আপনাকে।