খতনা বা মুসলমানি কি, কেন এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই ছেলে শিশু একটু বড় হলেই তার খতনা বা মুসলমানি করানোর তোরজোড় শুরু হয়ে যায়।
খতনা বা মুসলমানি কি, কেন এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা।
প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই ছেলে শিশু একটু বড় হলেই তার খতনা বা মুসলমানি করানোর তোরজোড় শুরু হয়ে যায়। খতনা কী তা কমবেশি সবারই ধারণা আছে। তবে এটা নিয়ে যেহেতু খুব বেশি প্রচার নেই, তাই অনেকেই ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন।
পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল অংশকে ঢেকে রাখে, এই অতিরিক্ত চামড়া কেটে ফেলে দেওয়াই খতনা বা মুসলমানি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খতনা সমাজব্যবস্থা ও ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত হলেও এ নিয়ে তেমন প্রচার নেই।
তাই প্রচুর পরিমাণে শিশুর খতনা হাজামের মাধ্যমে করানো হয়। অনেকেই জানেন না যে হাসপাতালে শিশুর খতনা করানোর ব্যবস্থা আছে।
![]() |
খতনা বা মুসলমানি কি, কেন এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। |
কেন করা হয় খতনাঃ
ধর্মীয় কারণে মুসলমান ও খ্রিস্টানরা খতনা করিয়ে থাকে। কিছু কিছু রোগ হলে যেমন ফাইমোসিস, প্যারাফাইমোসিস হলে খতনা বা মুসলমানি করাতে হয়। ফাইমোসিস হলো পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া এমনভাবে মূত্রনালীকে ঢেকে রাখে, যার কারণে প্রস্রাব ঠিকমতো বের করতে পারে না।প্রস্রাব বের হতে না পেরে পুরুষাঙ্গের মাথা ফুলে ওঠে এবং শিশু ব্যথায় কান্নাকাটি করতে থাকে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে প্রস্রাবে ইনফেকশন, এমনকি কিডনি ফেইলিওরও হতে পারে। আবার অনেক সময় পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে গিয়ে টাইট হয়ে যায়।
যার ফলে চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নাড়াচাড়া করা যায় না। এক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে খতনা করানো প্রয়োজন। অনেক সময় ছোট শিশুদের পুরুষাঙ্গ প্যান্টের চেইনের সঙ্গে আটকে যেতে পারে।
এরকম পরিস্থিতিতেও অনেক সময় খতনা করানো হয়।
খতনার উপকারিতাঃ
জেনে হয়তো অবাক লাগবে, খতনার কিন্তু উপকারিতাও আছে! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতাটি হলো, খতনা করে পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র খতনার কারণেই এ ক্যান্সার মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্য নেই বললেই চলে।পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
কখন খতনা করাবেন নাঃ
হাইপোস্পেডিয়াসিস রোগে খতনা করানো যায় না। এটি পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটি। এতে প্রস্রাবের নালী পুরুষাঙ্গের মাথায় না থেকে নিচের দিকে থাকে। এক্ষেত্রে চিকিত্সা করাতে হয় এবং খতনা করানোর আগে এ জন্মগত ত্রুটি ঠিক করাতে হয়।খতনা করানোর আগে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ এমনটাও দেখা গেছে যে, শুধু খতনা করানোর কারণেই অনেক রোগী রক্তপাতের ফলে মারা গেছে। অনেক শিশুর জন্মগত রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকতে পারে।
তাই খতনার আগে শিশুর জন্মগত রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করাটা জরুরি।
সতর্কতাঃ
অভিজ্ঞ চিকিত্সকের মাধ্যমে খতনা করালে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না বললেই চলে। তবে হাজামদের দিয়ে খতনা করালে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেলা, পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।এ সমস্যাগুলো অভিজ্ঞ চিকিত্সকের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শিশুর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে হাজামের পরিবর্তে চিকিত্সক দ্বারা খতনা করার। বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই শিশুর খতনা করানো হয় এবং খরচ খুবই অল্প।
COMMENTS