উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি। আর্টারি এবং ধমনীর মধ্যে দিয়ে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল করে। রক্ত চলাচলের সময় আর্টারি দেওয়ালে সৃষ্টি চাপই রক্তচাপ।
উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি।
আর্টারি এবং ধমনীর মধ্যে দিয়ে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল করে। রক্ত চলাচলের সময় আর্টারি দেওয়ালে যে চাপ সৃষ্টি হয় সেটিই ব্লাড প্রেসার(Blood pressure) বা রক্তচাপ। হার্টের সঙ্কোচনের ফলে হার্ট থেকে রক্ত আর্টারির মধ্যে দিয়ে চলার সময় রক্তচাপ মাপলে যে রিডিং বা মাপ পাওয়া যায় সেটাই সিস্টোলিক প্রেসার (Systolic pressure)।
আবার হার্টের প্রসারিত অবস্থায় প্রেসার রিডিং বা মাপ ডায়াস্টোলিক প্রেসার (Diastolic pressure)। কারও রক্তচাপ ১২০/৮০ mm of Hg হলে সিস্টোলিক প্রেসার হল ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক ৮০।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির (Adult person) সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০ হল তার রক্তচাপ স্বাভাবিক।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির (Adult person) সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০ হল তার রক্তচাপ স্বাভাবিক।
উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি। |
উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার)
ধারাবাহিকভাবে সিস্টোলিক (Systolic) ও ডায়াস্টোলিক (Diastolic) প্রেসার যদি যথাক্রমে ১৪০ এবং ৯০ মিলি মিটার অভ মার্কারির (mm of Hg) বেশি থাকে তখন উচ্চ রক্তচাপ ধরা হয়।
ব্লাড প্রেসার বাড়তে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তা না হলে রেটিনাল রক্ত নিঃসরণ এবং কিডনির কাজ ব্যাহত হলে সমস্যা জটিল আকার নেয়। মাথা ঝিমঝিম করলে (Dizziness) বা টললে, হৃদস্পন্দন (Pulse) হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বুক ধড়ফড় করলে(Increase heartbeat), মুখে ফ্যাকাশে(Pale face) ভাব দেখা দিলে, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সিস্টোলিক প্রেসার ২০ মিলিমিটারের মত কমে গেলেও সতর্ক হওয়া উচিত।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভাল। কম চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন কোলেস্টেরলমুক্ত মাখন, চর্বি বা ননীমুক্ত দুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাতে বাড়তি লবন একদম খাবেন না। সোডা, চিনি দেয়া কফি, চা, ঠান্ডা পানীয় এবং অ্যালকোহল না খাওয়াই ভাল।
উচ্চ রক্তচাপ কারণঃ
ডাক্তারি পরিভাষায় উচ্চ রক্তচাপ এখন লাইফস্টাইল রোগ (Life style disease)। গতিতাড়িত জীবন ধারার স্ট্রেস (মানসিক চাপ), কাজের চাপ, পেশাগত কারণে সেডেনটারি লাইফস্টাইল উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। সেই সাথে অতিরিক্ত পরিশ্রম, বেশি রাতে খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ব্যায়ামের অভাব উচ্চ রক্তচাপের কারণ। এ ছাড়া জেনেটিক কারণে অর্থাৎ পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সাবধান হওয়া উচিত।উচ্চ রক্তচাপ লক্ষণসমূহঃ
- ঘাড়ে যন্ত্রণা,
- মাথা ব্যথা,
- মাথা ভারি লাগা,
- চোখ মুখ লাল হয়ে যাওয়া,
- বুকে ব্যথা।
ব্লাড প্রেসার বাড়তে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তা না হলে রেটিনাল রক্ত নিঃসরণ এবং কিডনির কাজ ব্যাহত হলে সমস্যা জটিল আকার নেয়। মাথা ঝিমঝিম করলে (Dizziness) বা টললে, হৃদস্পন্দন (Pulse) হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বুক ধড়ফড় করলে(Increase heartbeat), মুখে ফ্যাকাশে(Pale face) ভাব দেখা দিলে, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সিস্টোলিক প্রেসার ২০ মিলিমিটারের মত কমে গেলেও সতর্ক হওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপে খাওয়া দাওয়াঃ
অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ধমনীর গায়ে লিপিডের স্তর পড়ে। এতে ধমনীর পরিধি কমে যায়, রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে যায়। রক্ত প্রবাহ বেশি হওয়ায় রক্তচাপ বাড়ে। বেশি লবন বা সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন সল্টেড স্ন্যাকস, রেডিমেড স্যুপ, ডেয়ারি প্রডাক্ট ইত্যাদি) খেলে, সোডিয়ামে পানি ধরে রাখার (Sodium water retention) ফলে রক্তে জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তের আয়তন (Volume) বেড়ে যাওয়ায় ধমনীর ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি হয়।উচ্চ রক্তচাপে যা খাবেনঃ
যথাসম্ভব বাড়ির খাবার খাওয়া অভ্যাস করা ভাল। রাত আটটার মধ্যে ডিনার করে নেয়া উচিত। টাটকা সবজি, ফল, জ্যান্ত মাছ নিয়মিত খান।অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভাল। কম চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন কোলেস্টেরলমুক্ত মাখন, চর্বি বা ননীমুক্ত দুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাতে বাড়তি লবন একদম খাবেন না। সোডা, চিনি দেয়া কফি, চা, ঠান্ডা পানীয় এবং অ্যালকোহল না খাওয়াই ভাল।
দোকানের সল্টেড খাবার, প্রিজার্ভেটিভ দেয়া খাবার খাবেন না। রেডিমেড খাবার কেনার সময় খেয়াল রাখুন তার মধ্যে মোনোসোডিয়াম, সোডিয়াম সালফেট যেন না থাকে। তেলযুক্ত পাকা মাছ, গরু ও খাসির মাংস না খাওয়াই ভাল। ডিম মাঝে মাঝে খাওয়া চলতে পারে, কুসুম বাদ দিয়ে। ঘি, মাখন খাবেন না। সামুদ্রিক মাছ খেলে ভাল করে ধুয়ে নেবেন।
উচ্চ রক্তচাপে ব্যায়ামঃ
বয়স, উচ্চতা, শারীরিক গঠন অনুযায়ী দেহের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে ব্লাড প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ওজন বেশি হলে শরীরে আরও বেশি টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ করার জন্য হার্টের ওপর চাপ পড়ে। ট্রাংকাল ওবেসিটি বা ভুঁড়িতে মেদবৃদ্ধির কারণ ভুল ফুড হ্যাবিট এবং স্ট্রেস। তাছাড়া ব্যায়ামের অভাবে ওবেসিটি সমস্যা সৃষ্টি করে।তাই যথাযথ খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম মেদ কমানোর পাশাপাশি কার্ডিওভাসকিউলার হেলথেরও উন্নতি করে। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন কারণ হাই ব্লাড প্রেসারে অতিরিক্ত ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করতে পারে। তাই ধীরে ধীরে শুরু করুন। প্রতিদিন আধ ঘণ্টা ব্যায়াম করুন।
মর্নিংওয়াক, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, সাঁতারের সময় সুবিধামত বেছে নিন। হার্টের অসুখ ও রক্তচাপ না হতে এবং স্ট্রেস কমাতে যোগ ব্যয়াম, বজ্রাসন, ভুজঙ্গাসন, পদ্মাসন প্রাণায়াম ও গোমুখাসন ব্যায়াম করুন। রাতে খুব দেরি না করে ঠিক সময়ে শুতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধানঃ
ব্লাড প্রেসারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি যে ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা হয় তা হলঃ- ১. রাউলফিয়া, ২. গ্লোনয়িন, ৩. প্যাসিফ্লোরা, ৪. অরাম মেটালিকাম, ৫. স্পারটিয়ম স্কোপ্যারিয়ম , ৬. ক্র্যাটিগাস অক্স।
নিম্ন রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে ওষুধ ব্যবহৃত হয় তা হলঃ- ১. থেরিডিয়ন, ২. জেলসিমিয়াম, ৩. ক্যালিফস।
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষণভেদে নিম্নলিখিত ওষুধ দেয়া হয়। যথাঃ- ১. ক্যাকটাস, ২. নাজা, ৩. ডিজিটেলিস, ৪.ক্র্যাটিগাস অক্স, ৪. এমিল নাইট্রেট।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
ধূমপানঃ
টেনশন কমানোর উদ্দেশ্যে ক্রমাগত ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনিতেই স্ট্রেস এবং টেনশন প্রেসার বাড়ায়। দীর্ঘদিন উদ্বিগ্ন (Anxiety), স্ট্রেসে ভুগতে থাকলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে ধূমপান আরও ইন্ধন জোগায়। দিনে ২০টি সিগারেট খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দ্বিগুণ (Two times) বেড়ে যায়, সঙ্গে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ে পাঁচ গুণ (Five times)। তাই ধূমপান ছেড়ে দেওয়া উচিত।বংশগতঃ
পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেক্ষেত্রে বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি। |
নিম্ন রক্তচাপ (লো-ব্লাড প্রেসার):
স্বাভাবিক মানের তুলনায় ব্লাড প্রেসার কম থাকলে, সিস্টোলিক (Systolic) ও ডায়াস্টোলিক (Diastolic) প্রেসার যথাক্রমে ৯০/৬০ মিলিমিটার হলে সেটি নিম্ন রক্তচাপ। নিম্ন রক্তচাপে হার্ট, ব্রেন, কিডনিতে অক্সিজেন সরবরাহ কম হয়, পুষ্টির (Nutrient) ঘাটতি ঘটে।নিম্ন রক্তচাপকারণঃ
ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের অভাব। হার্টের ভালভের ডিজঅর্ডার, কিডনির সমস্যা। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেও ব্লাড প্রেসার অনেক সময় কমে যায়। ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে, ওজন কমে যায়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। গুরুতর ইনফেকশন হলে ব্যাকটেরিয়া টক্সিন তৈরি করে যেটি ব্লাড ভেসেলের (Artery and vein) ক্ষতি করে, ফলে ব্লাড প্রেসার অনেকটা কমে যায়।নিম্ন রক্তচাপ লক্ষণসমূহঃ
- দুর্বল লাগা। বাসে উঠতে গেলে বা রোদে বের হলে মাথা ঘোরা,
- বুক ধড়ফড় করা,
- চোখে অন্ধকার দেখা,
- মনোযোগের অভাব,
- অজ্ঞান হয়ে পড়া,
- বার বার পানির তৃষ্ণা পাওয়া,
- ডিপ্রেশন,
- মাথা ঝিমঝিম করা,
- বমি বমি ভাব।
নিম্ন রক্তচাপে যা খাবেনঃ
পানি বেশি করে খান। এতে রক্তের পরিমাণ বেড়ে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। নিম্ন রক্তচাপ কমার জন্য এ দুটোই জরুরি। লবন-চিনির পানি খান। লবন দেহে পানি ধরে রাখে তাই নিম্ন রক্তচাপের রোগীর ডায়েটে লবন থাকা দরকার। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাক-সবজি (Green vegetables), আপেল, খেজুর যাতে আয়রন আছে খান। এছাড়া ভিটামিন ‘বি’, ভিটামিন ‘সি’ও খাবারে থাকলে ভাল। লো-কার্বোহাইড্রেট মিল দিনে অল্প করে খান, বার বার খান। সঙ্গে ওষুধপত্র।হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধানঃ
ব্লাড প্রেসারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি যে ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা হয় তা হলঃ- ১. রাউলফিয়া, ২. গ্লোনয়িন, ৩. প্যাসিফ্লোরা, ৪. অরাম মেটালিকাম, ৫. স্পারটিয়ম স্কোপ্যারিয়ম , ৬. ক্র্যাটিগাস অক্স।
নিম্ন রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে ওষুধ ব্যবহৃত হয় তা হলঃ- ১. থেরিডিয়ন, ২. জেলসিমিয়াম, ৩. ক্যালিফস।
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষণভেদে নিম্নলিখিত ওষুধ দেয়া হয়। যথাঃ- ১. ক্যাকটাস, ২. নাজা, ৩. ডিজিটেলিস, ৪.ক্র্যাটিগাস অক্স, ৪. এমিল নাইট্রেট।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি। |
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ
Excellent.
Excellent.
Thank you so much for your comment.