মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি। 'মাইগ্রেন' শব্দটি ফরাসি, এর উৎপত্তি ল্যাটিন হেমিক্রেনিয়া থেকে। হেমি অর্থ অর্ধেক এবং ক্রেনিয়া অর্থ মাথার খুলি বা করোটি
মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি।
'মাইগ্রেন' শব্দটি ফরাসি, এর উৎপত্তি ল্যাটিন 'হেমিক্রেনিয়া' থেকে। হেমি অর্থ অর্ধেক এবং ক্রেনিয়া অর্থ মাথার খুলি বা করোটি। অর্থাৎ মাথার অর্ধেক বা যেকোন পাশে।
যেহেতু রোগটি মাথার যে কোন একপাশ জুড়েই শুরু হয়, তাই চলতি কথায় এটিকে আধকপালি বলা হয়। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষেরও এ রোগ হতে পারে।
![]() |
মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি। |
World Fedaration of Neurology 'র সংজ্ঞা অনুযায়ী মাইগ্রেন হল এমন একটি রোগ যেখানে বার বার মাথাব্যথার সঙ্গে বমিভাব, চোখের যন্ত্রণা, দৃষ্টিশক্তিতে অসুবিধা, খাবার ইচ্ছে কমে, আলো এবং শব্দ সহ্য করতে পারে না, বমি বা বমিবমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ থাকবে।
মাথাব্যথার তীব্রতা, স্থায়িত্ব ও ধরন একেক সময় একেক রকম হতে পারে।
মাইগ্রেনের ৮৫% ক্ষেত্রই জটিলতাহীন, চোখের সমস্যা থাকে ১০% ক্ষেত্রে, নার্ভের তীব্র যন্ত্রণা ৪%, অন্যান্য উপসর্গ ১% ক্ষেত্রে দেখা যায়।
মাইগ্রেন এর প্রকারভেদঃ
মাইগ্রেনকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়।ক্লাসিক মাইগ্রেন (Classic Migraine): যেখানে যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে কিছু পূর্বাভাস থাকে। এরপর শুরু হয় আসল যন্ত্রণা, থাকে ১ থেকে ৩ দিন।
কমন মাইগ্রেন (Common Migraine): হঠাৎ করেই মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। কয়েকঘন্টা পর নিজে থেকেই আস্তে আস্তে কমে যায়।
কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন (Complicated Migraine): মাথার যন্ত্রণা বেশ কয়েকদিন থাকে। দেহের কোন অঙ্গ অবশ লাগতে পারে, দেখতে অসুবিধা হতে পারে, বারে বারে বমিও হতে পারে।
অপথালমোপ্লেজিক মাইগ্রেন (Opthalmoplegic Migraine): চোখের উপরি ভাগ থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথাসহ রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। এমতাবস্থায় রোগী আলো একদম সহ্য করতে পারে না। অন্ধকার ঘরে থাকতেই রোগী পছন্দ করে।
ব্যাসিলার আর্টারি মাইগ্রেন (Basilar Artery Migraine): সাধারণত মাথার পেছন থেকে এ ব্যথা শুরু হয় এবং সঙ্গে মাথা ঘোরাভাব থাকতে পারে।
হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন (Hemiplegic Migraine): ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শরীর অবশভাব থাকে। এটি সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে।
মাইগ্রেনের কারণসমূহঃ
মাইগ্রেন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। নিম্নে মাইগ্রেনের উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ তুলে ধরা হলো-- জেনেটিক বা বংশগত।
- দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা এবং মানসিক চাপ।
- পরিবেশ দুষণ যথা- শব্দ দূষণ, বায়ু দুষণ ইত্যাদি।
- মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট জাতীয় খাবার খেলে।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং পিরিওডের সময়কালেও হতে পারে।
- বেশি সময় ধরে টিভি দেখা এবং কম্পিউটারে কাজ করা ।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপান এবং মদ্যপান করা।
- তীব্র ঠান্ডাতে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
- রোদে এবং গরম বা উত্তাপের মধ্যে বেশি সময় ধরে কিছু করা।
- তীব্র বা ঝাঝালো গন্ধে দীর্ঘ সময় কাটানো সেটা আতর কিংবা পারফিউম বা অন্যকিছুও হতে পারে।
- চোখের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য না রেখে অনেক কম বা বেশি আলোতে কাজ করা।
- চকলেট বা চকলেট জাতীয় খাবারের কারণে।
- ঘুম কম হওয়া বা নিয়মিত না ঘুমানো এবং অতিরিক্ত সময় ধরে বিছানায় শুয়ে থাকা।
- কম পানি পান করা এবং অনিয়মিত খাবার খাওয়া অর্থাৎ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা।
মাইগ্রেন কীভাবে বুঝবেনঃ
মাইগ্রেনের বেশ কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ আছে, যার সাহায্যে অন্য মাথা ব্যথা থেকে মাইগ্রেনকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। পুরুষের চেয়ে নারীদের (১:৫) মধ্যেই মাইগ্রনে বেশি হয়ে থাকে।- দিনের যে কোনও সময় ব্যথা শুরু হতে পারে, বিশেষতঃ সকালে।
- যে কোনো একটি চোখের ঠিক পিছনে অস্বস্তিকর মৃদু ব্যথা শুরু হয়।
- আধঘন্টার মধ্যে ব্যথা বেড়ে সেইদিকের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে, কপালের রগে দপদপানি শুরু হয়। বাড়তে বাড়তে অসহনীয় হয়ে উঠে।
- রোগীর মাথা ঘোরায়, বমি হয়, শব্দ, আলো, এমনকি স্বাভাবিক কথাবার্তাতেও রোগী অসহ্য মনে করে।
- চেষ্টা করে অন্ধকার ঘরে একা শুয়ে থাকতে।
- মেজাজটাও সপ্তমে চড়ে থাকে, অকারণে রেগে ওঠে অপরের ওপর।
- সাধারণতঃ এক থেকে তিনদিনের মধ্যেই ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে, রোগী সুস্থতা বোধ করে।
- বারে বারে যাদের এমন হয় তাদের মধ্যে শতকরা ২০ জন আগেই বুঝে ফেলেন, তারা হয়তো মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন।
- কয়েকদিন আগে তাদের ঘুম কমে যায়, খাবার ইচ্ছে কমে যায়।
- অকারণে ক্লান্তি ও অবসাদ চলে আসে, দেখতে বা দৃষ্টিতে অসুবিধা হয়, চোখের সামনে আলোর ঝলকানি হয়, দেহের এক পাশ দুর্বল বা অবশ লাগে, কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যায় ইত্যাদি।
মাইগ্রেন পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ
রোগীর ইতিহাস থেকেই মাইগ্রেন শনাক্ত যায়। চোখ এবং সাইনাসের পরিক্ষা করা যেতে পারে। বারবার এক স্থানে ব্যথা হলে ব্রেনের সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করাতে হবে।মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিঃ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটা নিজস্ব প্রকৃতি আছে। রোগের উৎপত্তি, হ্রাস, বৃদ্ধি, অনুভুতি, স্থান ইত্যাদি জানতে হয়। মোটকথা রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং সার্বদৈহিক লক্ষণ সংগ্রহ করে সঠিক ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। অন্য সকল প্যাথির মত গতানুগতিক প্রেসক্রিপশনে রোগা-রোগ্যের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। অবশ্যই মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করতে হয়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System) উজ্জীবিত করে। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রেও ভিন্ন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না।
নিম্নে রবিন মার্ফি'র রেপার্টরী থেকে মাইগ্রেন চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১ম গ্রেডঃ এগারিকাস, এন্টিম ক্রুড, এসাফটিডা, ব্রায়োনিয়া, চায়না, কফিয়া, জেলসেমিয়াম, ইগ্নেশিয়া, ইপিকাক, আইরিস ভারসিকলর, নেট্রাম মিউর, নাক্স ভমিকা, ফসফরাস, পালসেটিলা, স্যাঙ্গুইনেরিয়া ক্যানাডেনসিস, সাইলিসিয়া, থুজা, জিংকাম মেটালিকাম।
২য় গ্রেডঃ এনাকার্ডিয়াম অরিয়েন্টাল, আর্জেন্টাম মেটালিকাম, আর্সেনিক এল্বাম, এসারাম ইউরোপিয়াম, ক্যাক্টাস গ্রান্ডিফ্লোরাস, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, ক্যাল্কেরিয়া ফস, ক্যামোমিলা, ইউপেটরিয়াম পার্ফোলিয়াটাম, ক্যালি ফস, ন্যাট্রাম সালফ, সেপিয়া, স্ট্র্যামোনিয়াম, সালফার, ট্যাবেকাম (টোবাকো), থেরিডিয়ন কিউরাসাভিকাম, ভেলেরিয়ানা অফিসিনালিস।
৩য় গ্রেডঃ একোনাইট, এপিস মেল, আর্নিকা মন্ট, অরাম মেট, বেলাডোনা, ক্যালাডিয়াম সেগুইনাম, কস্টিকাম, সেড্রন, চেলিডোনিয়াম, সিকুটা ভিরোসা, সিমিসিফিউগা, সিনা, ককোলাস, কলোসিন্থ, গ্লোনইন, গ্রাফাইটিস, ক্যালি-বাইক্রোম, ল্যাক ক্যান, ল্যাকেসিস, লাইকোপডিয়াম, অপিয়াম, স্কোটেলারিয়া, স্পাইজেলিয়া, টেরেন্টুলা হিস্পানিকা।
COMMENTS