সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এবং হোমিওপ্যাথি। মেরুদন্ডের কশেরুকার মাঝখানের ডিস্কের ডিজেনারেশন বা ক্ষয়প্রাপ্ত রোগীর সংখা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এবং হোমিওপ্যাথি।
মেরুদন্ডের কশেরুকার মাঝখানের ডিস্কের ডিজেনারেশন বা ক্ষয়প্রাপ্ত রোগীর সংখা দিন দিন যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। হোমিওপ্যাথি ব্যতীত অন্যকোন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এর কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই।
একমাত্র হোমিওপ্যাথি দ্বারাই এ রোগের আরোগ্য সম্ভব। হোমিওপ্যাথিতে রোগ নয়, রোগীর চিকিৎসা করলেও রোগ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকলে রোগীর জন্য ওষুধ নির্বাচনে সুবিধা হয়। মেরুদন্ডের হাড়ের যে সকল রোগ হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় স্পন্ডিলাইটিস (Spondylitis) এবং স্পন্ডিলোসিস (Spondylosis) রোগকে।
![]() |
সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এবং হোমিওপ্যাথি। |
স্পন্ডিলাইটিসঃ
সাধারণত এটি এক বা একাধিক কশেরুকার প্রদাহ। এটি অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis) রোগের কারণে হয়ে থাকে। স্পন্ডিলাইটিস মূলত তরুণ পীড়া।স্পন্ডিলোসিসঃ
স্পন্ডিলোসিস হলো মেরুদন্ডের কশেরুকার মাঝখানের ডিস্কের ডিজেনারেশন বা ক্ষয়প্রাপ্তি। এটি মেরুদন্ডের সাইনোভিয়াল সন্ধিও (Synovial joints) আক্রান্ত করতে পারে। এটি সাধারণত দেখা যায় মেরুদন্ডের সারভাইক্যাল, থোরাসিক অথবা লাম্বার অংশে। ঘাড়ের অংশে হলে বলা হয় সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস, থোরাসিক কশেরুকায় হলে থোরাসিক/ডরসাল স্পন্ডিলোসিস এবং লাম্বার অংশে হলে বলা হয় লাম্বার স্পন্ডিলোসিস। স্পন্ডিলোসিসকে সন্ধির আগষ্ট রোগও বলা হয়।এঙ্কাইলোসিস (Ankylosis) স্পন্ডিলোসিস আর একটি পরিচিত নাম, যা মূলত মেরুদন্ড এবং সেক্রো-ইলিয়াক সন্ধিকে (Sacro-iliac joint) আক্রান্ত করে। মাঝে মাঝে এটি কাঁধের এবং হিপ সন্ধিতে (Hip joint) দেখা যায়। আর্থ্রাইটিস, মেরুদন্ড এবং স্পাইনে অতিরিক্ত অস্থিবৃদ্ধি এ রোগের প্রধান কারণ। এটি তরুণ বয়সেই বেশি দেখা যায়। স্পন্ডিলোসিস মূলত চিরপীড়া।
সাইকোসিসই এর প্রধান কারণ তবে সোরা-সাইকোসিস, সোরা-সিফিলিস অথবা সোরা, সিফিলিস এবং সাইকোসিস একত্রে মিলিত হলেও এ রোগ দেখা দেয়। কখনও কখনও ইহা কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না। শুধুমাত্র রেডিওগ্রাফির (X-ray) মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়। রেডিওগ্রাফিতে দুই মেরুদন্ডের কশেরুকার মাঝের দুরত্ব কমে যাওয়া অথবা অস্থির বাইরের দিকের অতিরিক্ত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে বাহুর দুর্বলতা এবং নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা দেখা যায়।
(ক) বংশগত কারণ।
(খ) সারভাইক্যাল স্পাইনের ক্ষয়সাধন।
(গ) সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, পড়ালেখা ও রং তুলির কাজ করা।
(ঘ) মাথায় অতিরিক্ত ভার বহন করা।
(ঙ) হাড়ের ভিসকো-ইলাসটিক (Visco-elastic) উৎপাদন কমে যাওয়া।
(চ) ভার্টিব্রাল ডিস্কের স্থানচ্যুতি এবং অস্থির বাইরের দিকে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে স্নায়ুমূলের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
(ছ) কখনও কখনও আঘাতের পরও হতে পারে।
২. ব্যথা ঘাড় থেকে শুরু হয়ে অক্সিপুট (Occiput) অথবা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (যখন C3 আক্রান্ত হয়)।
৩. হাঁচি কাশির সময় ব্যথার বৃদ্ধি।
৪. বাহুর দুর্বলতা, শীর্ণতা ও অনুভূতিহীনতা।
৫. মাথাব্যথাসহ বমি বমি ভাব, চোখের দৃষ্টি কমে যায়।
৬. কষ্টকর ঢোক গেলা (অতিরিক্ত অস্থি বৃদ্ধি হলে)।
৭. হাত ও বাহুর অবশতা।
৮. সারভাইক্যাল স্নায়ুমূলের চাপজনিত চিহ্ন ( Physical signs in cervical root comprssion)।
যদি অপারেশনের প্রয়োজন মনে হয়, তখন MRI (Magnetic Resonance Imaging) করে Electro physiological পরিক্ষার মাধ্যমে স্নায়ুমূল এবং প্রান্তদেশীয় (Peripheral) স্নায়ুর ক্ষত আছে কিনা দেখতে হবে।
(ক) মাথা আস্তে আস্তে পাশাপাশি (ডানে-বামে), সামনে পিছনে বাঁকানো।
(খ) মাথার পিছনে হাত রেখে আস্তে আস্তে চাপ দেওয়া।
(গ) হাতের ব্যায়াম করা (Extension, Flexion, Internal & External rotation)।
(ঘ) বাহুর মর্দন (Massage) করা।
(ঙ) টেনিস বলের সাহায্যে হাতের আঙুলের ব্যায়াম করানো। আক্রান্ত অংশে গরম সেঁক দেওয়া।
(খ) শক্ত বিছানায়, নীচু বালিশে ঘুমানো।
(গ) হাতে ভারি ওজনের কোন কিছু বহন না করা।
(ঘ) জোরে কথা না বলা।
(ঙ) মাথা দিয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া।
(চ) সারভাইক্যাল কলার ব্যতীত রিক্সা, স্কুটার, জিপে ভ্রমণ না করা।
(ছ) বসার সময় অবশ্যই ঘাড় সোজা রাখা।
সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসঃ
মধ্যবয়সী এবং পরিণত বয়সের লোকদের রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে সারভাইক্যাল স্পাইনের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। ঘাড়ের মেরুদন্ডের দুই কশেরুকার মাঝে ডিস্কের ক্ষয় সাধন সাধারণত লক্ষণহীন, তবে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যহীনতা, ঘাড়ের নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা, ঘাড়ের ব্যথা, বাহুর শীর্ণতা অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসে সাধারণত C5-6, C6-7 এবং C4-5 ভারটিব্রাল বরাবর এবং C6, C7 এবং C5 স্নায়ুমূল বেশি আক্রান্ত হয়।কাদের হয়?
এটি মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষের বেশি হয়। সাধারণত ফেরিওয়ালা, কুলি, যারা স্কুটার, জিপগাড়ী এবং অমসৃন রাস্তায় রিক্সায় অতিরিক্ত ভ্রমণ করে তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যারা অতিরিক্ত বসে বসে কাজ করে তাদের হয়।কেন হয় / কারণঃ
স্পন্ডিলোসিস রোগের প্রধান কারণ এখনও খুজে পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণত নিম্নরূপ কারণে সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস হয়ে থাকে।(ক) বংশগত কারণ।
(খ) সারভাইক্যাল স্পাইনের ক্ষয়সাধন।
(গ) সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, পড়ালেখা ও রং তুলির কাজ করা।
(ঘ) মাথায় অতিরিক্ত ভার বহন করা।
(ঙ) হাড়ের ভিসকো-ইলাসটিক (Visco-elastic) উৎপাদন কমে যাওয়া।
(চ) ভার্টিব্রাল ডিস্কের স্থানচ্যুতি এবং অস্থির বাইরের দিকে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে স্নায়ুমূলের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
(ছ) কখনও কখনও আঘাতের পরও হতে পারে।
চরিত্রগত লক্ষণ (Clinical features):
১. ব্যথাসহ ঘাড়ের নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা।২. ব্যথা ঘাড় থেকে শুরু হয়ে অক্সিপুট (Occiput) অথবা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় (যখন C3 আক্রান্ত হয়)।
৩. হাঁচি কাশির সময় ব্যথার বৃদ্ধি।
৪. বাহুর দুর্বলতা, শীর্ণতা ও অনুভূতিহীনতা।
৫. মাথাব্যথাসহ বমি বমি ভাব, চোখের দৃষ্টি কমে যায়।
৬. কষ্টকর ঢোক গেলা (অতিরিক্ত অস্থি বৃদ্ধি হলে)।
৭. হাত ও বাহুর অবশতা।
৮. সারভাইক্যাল স্নায়ুমূলের চাপজনিত চিহ্ন ( Physical signs in cervical root comprssion)।
পরীক্ষাগারে রোগ নির্ণয় (Investigation):
এক্সরে সারভাইক্যাল অংশ উভয় পার্শ্বে (X-ray cervical spine both views)। এতে কশেরুকার ডিস্কের পরিবর্তন পাওয়া যাবে।যদি অপারেশনের প্রয়োজন মনে হয়, তখন MRI (Magnetic Resonance Imaging) করে Electro physiological পরিক্ষার মাধ্যমে স্নায়ুমূল এবং প্রান্তদেশীয় (Peripheral) স্নায়ুর ক্ষত আছে কিনা দেখতে হবে।
ব্যবস্থাপনা (Management):
ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি না দেওয়া হলে সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস ভালো করা সম্ভব হয় না। যখন হঠাৎ আক্রান্ত হয়, সারভাইক্যাল কলার পরার পূর্বে রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। তা না হলে স্নায়ুমূল আক্রান্ত হয়ে পেশির প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ব্যয়াম করা রোগীর জন্য আবশ্যক। যেমন-(ক) মাথা আস্তে আস্তে পাশাপাশি (ডানে-বামে), সামনে পিছনে বাঁকানো।
(খ) মাথার পিছনে হাত রেখে আস্তে আস্তে চাপ দেওয়া।
(গ) হাতের ব্যায়াম করা (Extension, Flexion, Internal & External rotation)।
(ঘ) বাহুর মর্দন (Massage) করা।
(ঙ) টেনিস বলের সাহায্যে হাতের আঙুলের ব্যায়াম করানো। আক্রান্ত অংশে গরম সেঁক দেওয়া।
থেরাপিস্ট অবশ্যই রোগীকে তার ব্যায়াম শিখিয়ে দিবেন।
(ক) সারভাইক্যাল কলার ব্যবহার করা।(খ) শক্ত বিছানায়, নীচু বালিশে ঘুমানো।
(গ) হাতে ভারি ওজনের কোন কিছু বহন না করা।
(ঘ) জোরে কথা না বলা।
(ঙ) মাথা দিয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া।
(চ) সারভাইক্যাল কলার ব্যতীত রিক্সা, স্কুটার, জিপে ভ্রমণ না করা।
(ছ) বসার সময় অবশ্যই ঘাড় সোজা রাখা।
সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথিতে রোগের নাম করে ওষুধ নির্বাচন করা যায় না, সেক্ষেত্রে সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস রোগও ব্যতিক্রম নয়। রোগীর সার্বদৈহিক লক্ষণের সাথে মানসিক লক্ষণ সমষ্টির উপর লক্ষ্য রেখে ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। সেসব ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্বাচিত হয় সেগুলো নিম্নরূপঃসারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসঃ
এসিড ফস, আর্জ মেট, আর্নিকা, রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, বেলাডোনা, বেঞ্জয়িক এসিড, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ক্যালকেরিয়া ফস, কস্টিকাম, সিমিসিফিউগা, ডালকামারা, ল্যাকনেনথিস, পালসেটিলা, রুটা, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, নিউমোকক্কাই, আর্সেনিক, টিউবারকোলিনাম।বায়োকেমিক ওষুধঃ ক্যাল্কেরিয়া ফস(6x), ক্যাল্কেরিয়া ফ্লোর (12x), মাগনেশিয়া ফস (6x), ক্যালি মিউর (3x)।
সারভাইক্যাল স্পন্ডিলাইটিসঃ
একোনাইট, বেলেডোনা, রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, ডালকামারা, নাক্সভমিকা, সালফার, ক্যাল্কেরিয়া ফস, আর্সেনিক।বায়োকেমিক ওষুধঃ ফেরাম ফস (3x), মাগনেশিয়া ফস (6x)।
ভাবী ফল (Prognosis):
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসা করালে সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস সম্পূর্ণরুপে আরোগ্য সম্ভব।কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
ডাঃ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন
BHMS, PGD, MPH(UniSA)
COMMENTS