0
বীর্য বা ধাতুঃ
বীর্যের আর এক নাম শুক্রবীজ। যৌন-মিলনের ( During sex or, Intercourse ) সময় পুরুষাঙ্গ নালী দিয়ে যে সাদা মতো এক ধরনের আঠালো তরল পদার্থ নির্গত হয়ে থাকে, তাকেই বীর্য বা শুক্রবীজ বলে। সামান্য একফোঁটা শুক্রবীজের মধ্যে অসংখ্য শুক্রকীট থাকে। পুরুষ যৌবনে পদার্পণ করলেই বীর্যাধার বা কোষের মধ্যে শুক্র সৃষ্টি হতে শুরু করে এবং এই সৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকে পয়ষট্টি-পচাত্তর বছর বয়স পর্যন্ত।

What is semen
What is semen


ধাতু বা বীর্যের গঠনঃ
শুক্রবীজের মধ্যে থাকে মূলত-
প্রস্টেট(Prostate) গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত প্রস্টেট তরল,
সেমিনাল ভেসিক্যাল(Seminal Vesicle) থেকে নিঃসৃত সেমিনাল তরল,
গৌণ যৌন গ্রন্থি(Cowper's Glands) থেকে নিঃসৃত সেমিনাল প্লাজমা এবং
টেস্টিস(Testis) হতে উৎপন্ন সেমিনিফেরাস নালি ও এপিডিডাইমিস হতে নিঃসৃত তরল পদার্থ ও অসংখ্য শুক্রাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থটি ক্ষারকীয় তরল পদার্থ। ধাতুর মধ্যে যে ক্ষারীয় গন্ধ পাওয়া যায় তা মূলত এই প্রস্টেটের জন্যই। প্রস্টেট তরলের মধ্যে বিভিন্ন উৎসেচক যেমন- প্রটিওলাইটিক উৎসেচক, এসিড ফসফেটেজ, ফ্রাইবিনোলাইসিন, সাইট্রিক এসিড, উচ্চ ঘনত্বের জিঙ্ক ও বিটা গ্লুকোনিডেজ। প্রস্টেট তরলের মূল কাজ হল- ধাতুর PH মাত্রাকে ৫.৬ থেকে ৬ মধ্যে বজায় রাখা, যাতে স্ত্রী যোনিতে শুক্রাণুর গমন সহজ হয়।

সেমিনাল ভেসিকেল থেকে নিঃসৃত তরল মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ফ্রুক্টোজ, এস্কোর্বিক এসিড ও ইরগোথিওনাইন থাকে। উচ্চমাত্রায় ফ্রুকটোজ থাকায় শুক্রাণু তার পুষ্টি এই তরল থেকে গ্রহন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি ডিম্বাণুকে সে নিষিক্ত করতে পারে, স্ত্রী যোনিতে পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশের পর।

বীর্য বা ধাতুর মধ্যে প্রতি মিলিলিটারে ২০,০০০,০০০-২২৫,০০০,০০০ শুক্রকীট বা শুক্রাণু ( Sperm ) থাকে। সাধারণত খালি চোখে শুক্রাণু দেখা যায় না। অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে এক একটা শুক্রাণুকে মনে হবে যেন এক একটা লম্বা লম্বা ব্যাঙাচি। এর মাথার দিকটা বড় আকারের এবং গোলাকৃতি, আর নিচের অংশটা সূতার মত লম্বা। প্রতিটি শুক্রাণুর তিনটি অংশ থাকে যথা- মাথা, ধড় বা গলা এবং লেজ। শুক্রাণু লেজের সহায়তায় এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পারে। শুক্রাণুর গতি হল ১-৩ সেন্টিমিটার প্রতি মিনিটে। কোন কারণে শুক্রাণুর দেহ গঠনের বিকৃতি ঘটলে অর্থাৎ মাথার আকৃতি বড় হলে কিংবা লেজ অংশ না থাকলে শুক্রাণুর সঞ্চালন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও প্রতি মিলিমিটারে শুক্রাণুর সংখা যদি ২০,০০০,০০০ ( Twenty million ) এর কম হয় তবে শুক্রাণুর স্ত্রী ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার সম্ভাবনা কমে যায় এবং পুরুষের বন্ধাত্ব দেখা দেয়।

গুরুত্বঃ
বীর্য পুরুষের কাছে অতি মূল্যবান দৈহিক সম্পদ। কারণ বীর্য বা ধাতুর মধ্যে থাকে বহু সংখ্যক শুক্রাণু। আর এই বহু সংখ্যক শুক্রাণুর মধ্যে থেকে মাত্র একটি শুক্রাণু স্ত্রী ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি করে একটি নতুন প্রান, অর্থাৎ বীর্য হল নতুন জীবনের সৃষ্টির আধার।
এছাড়াও ধাতুর মধ্যে রয়েছে আমাদের দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কতকগুলি জৈব রাসায়নিক উপাদান। কিছু উৎসেচক ( Enzyme ) ও খনিজ লবণসহ পুরুষ দেহ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রাণু যখন স্ত্রী দেহে প্রবেশ করে তখন ধাতুর এই জৈব রাসায়নিক উপাদান থেকে তারা ( শুক্রাণু )তাদের পুষ্টি গ্রহন করে বেঁচে থাকে।
বীর্য যেকোন পুরুষের মানসিক ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। বীর্যকে নিজের দেহে সঞ্চিত রাখতে পারলে পুরুষ বলশালী তেজদীপ্ত ও বুদ্ধিমান হবে। 

Post a Comment

 
Top