হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি। পুষ্টিহীনতা সমস্যার অন্যতম ফল হচ্ছে ডিজেনারেশন অফ বোন বা হাড়ের ক্ষয়। মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি।
হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি (Degeneration of bone and Homeopathy):
পুষ্টিহীনতা সমস্যার অন্যতম ফল হচ্ছে ডিজেনারেশন অফ বোন বা হাড়ের ক্ষয়। মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
অস্টিওপোরোসিস বলতে বোঝায় ছিদ্রযুক্ত হাড়। এতে হাড় নরম হয়ে যায়, যাতে একটু বাঁকা হওয়া, হালকা জিনিস ওঠানো কিংবা কাশির মতো সামান্য চাপেও তা ভেঙে যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেহে থেকে ক্যালসিয়াম , ফসফেট এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের পরিমাণ কমলেই হাড় দুর্বল হয়। অস্টিওপোরোসিস অন্যান্য গ্রন্থিগত (এন্ডোক্রাইন) রোগের কারণে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেও হতে পারে।
হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি। |
হাড়ের ক্ষয় লক্ষণঃ
হাড় ক্ষয়ের প্রথম দিকে ব্যথা বা অন্য লক্ষণ দেখা দিতে নাও পারে। কিন্তু একবার অস্টিওপোরোসিস হলে যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে।- কোমরের পেছনে ব্যথা, বিশেষকরে মেরুদন্ডে, নিতম্বে, পাঁজর কিংবা কব্জিতে, যা কিনা ভাঙা বা জোড়া লাগা (স্পন্ডিলাইটিসের) মেরুদণ্ডের ক্ষেত্রে আরো তীব্র হতে পারে।
- ধীরে ধীরে উচ্চতা কমতে থাকে।
- পিঠে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- মেরুদণ্ড হাতে কবজি, কোমরসহ অন্যান্য হাড়ে ফ্র্যাকচার ইত্যাদি।
- মাংসে ব্যথা।
- গিঁটে ( জোড়ায় জোড়ায় ) ব্যথা।
হাড়ের ক্ষয় কারণঃ
হাড়ের শক্তি নির্ভর করে এর আকার এবং ঘনত্বের ওপর। অনেক ক্ষেত্রেই এই ঘনত্ব আবার নির্ভর করে হাড়ের ভেতরকার ক্যালসিয়াম, ফসফেট এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের ওপর। এদের পরিমাণ কমতে থাকে, তখন হাড়ের ভেতরের শক্তি কমে যেতে থাকে।দেহের হাড় প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে অর্থাৎ নতুন হাড় তৈরি হচ্ছে এবং পুরনো হাড় ভেঙে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে বলে হাঁড়ের পুনর্গঠন (রিমডেলিং বা টার্ন ওভার)।
হাড়ের একটি পুনর্চক্র সম্পন্ন হতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। তরুণ অবস্থায় অতি দ্রুত নতুন হাড় তৈরি হয়, ফলে হাড়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। কিন্তু বয়স ত্রিশের পর থেকে হাড়ের পুনর্গঠিত হয় ঠিকই, কিন্তু বৃদ্ধির চেয়ে ক্ষয় বেশি হয় বলে হাড় দুর্বল হতে থাকে।
রজঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) সময় যখন মহিলাদের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে, তাই সে সময় দেহে হাড়ের ক্ষয় তুলনামূলক বেশি বেড়ে যায়। যদিও হাড় ক্ষয় হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও, রজঃনিবৃত্তিকালীন মহিলাদের হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়া।
যা হাড়কে সবল করেঃ
নিম্নোক্ত বিষয় তিনটি সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব প্রয়োজনীয়-- নিয়মিত ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি দরকার যা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে।
হাড়ের ক্ষয় ঝুঁকির কারণঃ
যেসব কারণ অস্টিওপোরোসিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ন তা হল-লিঙ্গঃ পুরুষ অপেক্ষা মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি দ্বিগুণ। দেশে মহিলাদের অপুষ্টি এর অন্যতম কারণ। তার সঙ্গে থাকে রজঃনিবৃত্তিকালে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া।
বয়সঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ বাড়তে থাকে।
পারিবারিক ইতিহাসঃ যেসব পরিবারে অস্টিওপোরোসিসের ইতিহাস থাকে। সেই সব পরিবারের সদস্যদের আগে থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
দেহের আকারঃ যাদের দেহের আকার ছোট, অর্থাৎ যাদের শরীরে হাড়ের পরিমাণ স্বাস্থ্যবানদের তুলনায় কম, তাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি।
খাবারে অনিয়মঃ যারা খাবারে নিয়ম মানেনা, অত্যধিক ডায়েটিং করার অভ্যাস আছে, তাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিও বেশি দেখা যায়।
স্টেরয়েড ব্যবহারঃ দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলে হাড়ের ক্ষয়সাধন হয়ে থাকে। স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাই সাবধান হতে হবে। যদি বেশি দিনের জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
এ ছাড়া আরো কিছু কারণে যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, কিছু ওষুধ, খাদ্যে ক্যালসিয়ামের অভাব, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, হতাশা , স্তন ক্যান্সার ইত্যাদিতে কারণে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
বাহ্যিক কারণঃ
- ক্যালসিয়াম সম্পুরক খাদ্যের অভাব।
- দীর্ঘ সময় নড়াচড়া না করে কাজ করলে।
- অতিরিক্ত ধূমপান করলে।
- অতিরিক্ত মদ্যপান করলে।
- দীর্ঘ দিন মাসিক না হলে।
- দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকলে।
- পুষ্টিকর খাবার শোষন না হলে (Malabsorption)
যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবেঃ
অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ততই ভালো। রোগীর জন্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে মহিলারা রজঃনিবৃত্তির আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। হাড়ের সামান্য ক্ষয়কে বলে অস্টিওপেনিয়া। এতে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সময় থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বোন ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করে নিতে পারেন। এ ছাড়া, এক্সরেসহ আধুনিক সিটি স্ক্যান (কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি) মাধ্যমে স্ক্যানিংয়ের সুযোগ রয়েছে।জটিলতাঃ
অস্টিওপোরোসিসের জন্য সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো হাড় ভেঙে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার। বেশি ওজন বহনকারি হাড়ের ওপরই এর প্রকোপ বেশি থাকে। এর মধ্যে আছে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়াসহ চাপের কারণে বা পড়ে যাওয়ার কারণে মেরুদণ্ডের হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া। এসব সমস্যা থেকে আবার নানা ধরনের জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।প্রতিরোধঃ
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণই হচ্ছে অস্টিওপোরোসিস থেকে দূরে থাকার অন্যতম উপায়। খাবারের সঙ্গে ক্যালসিয়াম পেতে দুধজাত খাবার গ্রহণ জরুরি। কিন্তু দুধজাত খাবার ছাড়াও ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎস আছে।ওষুধ হিসেবে ক্যালসিয়াম গ্রহণের ফলে কারো কারো হয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ জন্য বেশি বেশি করে পানি এবং আঁশমুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি খেতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম কাজে দেয়। ধূমপান, ক্যাফেইন আছে এমন খাবার বা পানীয় এবং অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা জরুরী। হরমোন থেরাপি হাড় ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি ওষুধ সবচেয়ে জনপ্রিয় রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু হাড়ের ক্ষয় চিকিৎসাই শুধু নয়, এর অন্তর্নিহিত কারণ ও স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিৎসার জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন এবং রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
হাড়ের ক্ষয় এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ
বিউফো, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, ক্যাল্কেরিয়া ফ্লোর, ক্যাল্কেরিয়া ফস, কারসিনোসিন, সাইলেসিয়া, সিম্ফাইটাম ইত্যাদি।
হোমিওপ্যাথি বিষ্যক লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। এরকম আরো বেশি বেশি করে লেখা উচত। হোমিও অনুরাগীদের facebook এ হোমিওপ্যাথি পেইজটিকে লাইক দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এড্রেস https://www.facebook.com/hpathybd
অবশ্যই আরো বেশি লেখার চেষ্টা করব।
Symphytum Q/30/200konta khete hobe?