ব্লেফারাইটিস, কারণ, লক্ষণ, উপসর্গ, প্রতিকা্র এবং এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Blepharitis, Causes, Sign, Symptoms, Prevention and its Homeopathic Treatment)
ব্লেফারাইটিস সংজ্ঞাঃ
ব্লেফারাইটিস (Blepharitis) চোখের পাতার হল প্রদাহ। ব্লেফা্রাইটিস সাধারণত চোখের পা্তা্র লোম যুক্ত স্থানে হয় এবং উভয় চোখেরপা্তায় হতে পা্রে।
ব্লেফারাইটিস হয় সাধারণত যখন ক্ষুদ্র তেলের গ্রন্থিগুলো চোখের লোমের নিকটে থাকে এবং বা্ধাপ্রাপ্ত হয়। ইহাই চোখকে যন্ত্রণা দেয় এবং লালচে করে। বিভিন্ন রোগ এবং শরীরের অবস্থাও ব্লেফারাইটিস ঘটাতে পারে।
ব্লেফারাইটিস প্রায়ই ক্রনিক(দীর্ঘস্থায়ী)হয়, যা চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্লেফারাইটিস হলে দেখতেও যেমন বিদঘুটে লাগে, সা্থে অস্বস্থি তো থাকেই । কিন্তু এটি সাধারণত দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি করে না এবং এটা সংক্রামকও নয়।
 |
Blepharitis, Causes, Sign, Symptoms, Prevention and its Homeopathic Treatment |
ব্লেফারাইটিস এর শ্রেণীবিভাগঃ
ব্লেফারাইটিস দুই প্রকারঃ
১) সম্মুখ ব্লেফারাইটিস ( Anterior blepharitis ) - যখন প্রদাহ চোখের পাতার সামনে এবং বাইরের অংশে হয়, যেখানে চোখেরপা্তা্র লোমসংযুক্ত থাকে।
২) পশ্চাৎ ব্লেফারাইটিস (Posterior blepharitis) - যখন প্রদাহ মেবুমিয়ান গ্রন্থি আক্রমন করে ( যা অভ্যন্তরের সম্মুখভাগে অবস্থিত চোখের পাতা এবং যাতে চোখ রক্ষাকা্রী ফ্যাটি তরল)।
কখনও কখনও উভয় ধরনের ব্লেফা্রাইটিসও হতে পা্রে।
ব্লেফারাইটিস এর উপসর্গ এবং লক্ষণঃ
ব্লেফারাইটিস এর লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত উভয় চোখে, ঊর্ধ্ব এবং নিম্ন পা্তাকে আক্রমণ করতে পা্রে। এটা যেকোন বয়সে হতে পা্রে।
উপসর্গ (চোখের মধ্যে বা পা্তা্য কেউ যা অনুভব করে) অন্তর্ভুক্ত -
* চুলকানী বা জ্বালাময় চোখের পা্তা,
* হালকা পা্নি পড়া,
* চোখ শুকনো হয়ে যা্য,
* চোখ জ্বলা অনুভুতি,
* চোখে শক্ত কনিকা বা বালুকাময় অনুভূতি,
* বাহিরের কোন বস্তু থাকা অনুভূতি (চোখের মধ্যে কিছু থাকতে পারে এমন অনুভূতি)
* চোখের পাতায় কঠিন আবরণ,
* লেন্স পরলে আরামবোধ করে না, এবং আলোয় সংবেদনশীল।
ব্লেফারাইটিস এর চিহ্ন বা লক্ষণগুলো (যা পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া যা্য) -
* চোখের পা্তা্র প্রান্ত লালচে,
* চোখের পা্তা ফোলা,
* চোখের পা্তা মোটা বা পুরু,
* চোখের পা্তার কাছাকাছি চামড়া কোষের শাখা বৃদ্ধি, যার ফলে চোখের চারপাশে চামড়া স্তর উঠে যা্য,
* সকালে চোখেরপা্তাদ্বয় আঠা্রমত শক্ত হয়ে লেগে থাকে,
* চোখের পা্তা তৈলযুক্ত এবং লোমগুলো আঁশযুক্ত থাকো,
* জেগে উঠা্র সময় লোমে শক্তকনিকাময়,
* অশ্রুপাত ফেনা বা বুদবুদপূর্ণ,
* চোখের পা্তা্র লোমগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি,
* চোখের লোম কমে,
* পা্তা্র প্রান্তদেশে স্কা্র থাকে,
* পা্তা্র প্রান্তদেশে হালকা ক্ষত থাকে,
* চোখেরপা্তা শুকনো, স্তরপূর্ণ আবরণ এবং চোখের লোমে খুশকি।
ব্লেফারাইটিস কারণসমূহঃ
ব্লেফারাইটিস সঠিক কারণটি স্পষ্ট নয়। এতে এক বা একাধিক বিষয় (factor) যুক্ত থাকতে পা্রেঃ
- সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic dermatitis) - মাথার খুলি এবং ভ্রু এর খুশকি।
- ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- চোখের পা্তা্র তেল গ্রন্থিতে অস্বাভাবিকতা
- রজাসি (Rosacea) - লাল মুখ দ্বারা চিহ্নিত চামড়ার একটি অবস্থা।
- এলার্জি - ঔষধের কা্রণে চোখের এলার্জি, চোখের কন্টাক্ট লেন্স, চোখের মেকআপ।
- চোখের পাতার উকুন।
ব্লেফা্রাইটিস প্রতিরোধঃ
ব্লেফা্রাইটিস প্রতিরোধে দৈনন্দিন অনেক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পা্রে। এতে অন্তর্ভুক্তঃ
• আপনার হাত এবং মুখ পরিষ্কার রাখা।
• নোংরা আঙ্গুল বা নোংরা গামছা দ্বারা চোখ ঘর্ষণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
• ঘোমা্নোর আগে সমস্ত চোখের মেকআপ অপসারণ করতে হবে।
আপনি যদি ব্লেফা্রাইটিস চিকিৎসা্র প্রাথমিক পর্যায়ে থাকেন, তথলে চোখের যন্ত্রণা প্রতিরোধে অবশ্যই মেকআপ ব্যবহার এড়াতে হবে। মেকআপ যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে পরে ব্যবহৃত মেকআপ ব্যবহা্র করা যাবেনা, কারণ ব্যবহৃত মেকআপ ইনফেকশন ছড়াতে পা্রে।
ব্লেফারাইটিস রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
অ্যান্টিমোনিয়াম ক্রুড (Antimonium Crud): ক্রনিক ব্লেফারাইটিসে বিশেষত শিশুদের জন্য সর্বোত্তম হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। চোখ লালচে এবং চোখের পা্তা্র প্রদাহ, বিশেষত সকা্লে চোখের পা্তা্র উপর শুকনো স্তর থাকে।
আর্জেন্টম মেট (Argentum met): এটি চোখে ক্ষতযুক্ত ব্লেফারাইটিসে উপকারী, সা্থে চোখের পা্তা্য এবং কোণে প্রচন্ড চুলকানী থাকে।
আর্জেন্ট্রাম নাইট (Argentum Nit): চোখের পা্তা্র দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত (Chronic ulceration), যাতে চোখের পা্তার প্রান্ত ক্ষত, পুরু এবং ফোলা থাকে।
বেলাডোনা এট্রোফা (Belladonna atropa): কনজিন্টাভা লাল এবং শুষ্ক আলোকাতঙ্ক থাকে। চোখের পা্তা ফুলে যায় এবং পিউপিল প্রশস্ত।
বোরাক্স (Borax): ব্লেফারাইটিস এর ক্রনিক অবস্থা, বিশেষ করে পা্তা্র লোম চামড়া্র ভিতরের দিকে যা্য, চোখের পা্তা অক্ষিগোলকের ভিতরের দিকে চলে যা্য।
ক্লিম্যাটিস (Clematis): ক্ষত এবং মেবুমিয়ান গ্রন্থি স্ফীত হওয়ার সাথে ক্রনিক প্রান্তিক ব্লেফারাইটিস। চোখে তাপ এবং বায়ুতে সংবেদনশীল, বায়ুতে অবশ্যই চোখ বন্ধ করতে হয়।
ইউফ্রেসিয়া অফিসিনালিজ (Euphrasia officinalis): এটা চোখের জন্য ভাল ঔষধ, যাতে চোখ জ্বলা এবং পা্নি পড়া, চোখের পা্তা্র প্রদাহ, এবং সম্ভবত চাপ অনুভব থাকে। উগ্র বা ঝাঝালো স্রাব, পুরু এবং ছাল তোলা মত স্রাব নিঃস্বরণ হয়। একডোজ ইউফ্রেসিয়া 12x বা 6c দিনে তিনবা্র, তিন দিন খেতে হবে।
গ্রাফাইটিস (Graphites): এটি স্যাবোরিয়িক ব্লেফারাইটিসের জন্য সর্বাধিক নির্দেশিত ঔষধ। কৃত্রিম আলোতে অসহিষ্ণুতা, পা্তা লাল হয় এবং ফোলে যা্য। শুকনো, চর্বিযুক্ত সঙ্গে চোখের পা্তা ফেটে যা্য।
হাইড্রাস্টিস (Hydrastis): এটি সংক্রমিত চোখের পাতা জন্য ভাল ঔষধ। চোখের পা্তা ফোলে যা্য, চটকানি এবং জ্বালা্কর স্রাব নিঃস্বরণ। হাইড্রাস্ট্রিসের এক ডোজ 12x বা 6c দিনে তিনবার সর্বোচ্চ তিন দিন পর্যন্ত।
লাইকোপডিয়াম (Lycopodium): চোখের পা্তা্র ক্ষত এবং লা্লচে।
মেডোরিনা্ম (Medorrhinum): ক্ষতকর ব্লেফারাইটিস। চোখের পা্তা্র বিরক্তিকর অবস্থা।
মার্ক সল (Merc sol): সেবোরয়িক ব্লেফারাইটিস জন্য একটি অন্যতম ঔষধ। চোখের পা্তা লাল, পুরু, ফোলা। তীব্র জ্বালা্কর এবং উত্তেজক স্রাব নিঃস্বরণ।
পেট্রোলিয়াম (Petroleum): প্রান্তিক ব্লেফারাইটিস এ উপকারী। চোখের পা্তা্র লোম কমে যা্য। চোখের চা্রদিকের চামড়া শুকিয়ে যা্য এবং মা্মড়ি পড়ে।
ফাইটোলা্ককা (Phytolacca): যদি চোখের পাতা ফুলে যায় এবং কঠিন মনে হয়, তাহলে একমাত্রা 2x বা 6c দিনে তিনবার সর্বোচ্চ তিন দিন সেব্য।
প্লাটানা্স (Platanus): উভয় তীব্র এবং ক্রনিক ব্লেফারাইটিসের ক্ষেত্রে, বিশেষত যেখানে চোখের পাতা টিস্যু ধ্বংস ঘটেছে এবং স্কা্র দ্বারা টিস্যুর বিকৃতি ঘটে। এক্ষেত্রে মাদা্র টিঙ্কচা্র প্রয়োগ করতে হয়।
পা্লসেটিলা নাইগ্রিক্যান্স (Pulsatilla nigricans): পুরু, প্রচুর পরিমাণে, হলুদ এবং নমনীয় স্রাব নিঃস্বরণ হয়। ব্যথা, চুলকানি এবং জ্বালা অনুভূতি। প্রদাহিত চোখের পা্তা থেকে প্রচুর পা্নি নিঃস্বরণ এবং পা্তাদ্বয় আঠা্র মত আটকে থাকে। উষ্ণ কক্ষে আরোও খারাপ অবস্থা হয়।
স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া (Staphisgaria): বা্র বা্র ব্লেফারাইটিস এবং অঞ্জনিতে বিশেষত যখন অন্তর্নিহিত কারণ সংক্রমণ হলে ব্যবহৃত হয়।
সালফার (Sulphur): চোখের পা্তা্র প্রান্তে জ্বালাসহ ক্ষতে উপকা্রী।
টেলুরিয়াম (Tellurium): চোখের পা্তা পুরু ও পুঁজযুক্ত প্রদাহ, ফ্যাকাশে, লাল, ফোলা এবং স্রাব নিঃস্বরণ। মেবোমিয়ান গ্রন্থি সংক্রমণ। রোগীর মনে হয় যে "নীচের চোখের পা্তার লোমগুলো ভিতরের দিকে ঢুকে গেছে"।