চোখের সমস্যার জন্য শীর্ষ দশটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ!
চোখ হলো একটি আত্মার দ্বার! চোখে মনের প্রতিফলন, চোখে আত্মার প্রতিফলন, এবং চোখে স্বাস্থের প্রতিফলন ঘটে! কোনো ব্যক্তির 'মন' সরবরাহকৃত লক্ষণ দ্বারা হোমিওপ্যাথিতে আশ্চর্যজনক ভাবে চোখের অনেক সমস্যা সমাধান হয়। চোখ শরীরের সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা পরিচর্যার জন্য অবশ্যই একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথ দরকার। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সক চিকিত্সার জন্য অগ্রসর হওয়ার আগে চোখের সমস্যা নিয়ে নির্দিষ্ট সমালোচনামূলক পরামর্শ দিবেন। হোমিওপ্যাথিতে চিকিত্সা করার সময়, চোখের সমস্যায় কি কি লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে তা সম্পূর্ণ সংগ্রহ করে সঠিক মেডিসিন নির্বাচনে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়।
 |
Top 10 Homeopathic Remedies for Eye Problems |
চোখের বিভিন্ন সমস্যার চিকিত্সার সহায়ক হিসেবে হোমিওপ্যাথিতে অনেক ওষধ আছে। যাইহোক, প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত চোখের ছানি (cataract) , গ্লোকোমা (glaucoma) , পৌনঃপুনিক নেত্রপ্রদাহ (blepharitis or conjunctivitis), কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার (corneal opacities ) , এবং পৌনঃপুনিক অঞ্জনী (styes) মত চোখের সমস্যার জন্য, ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সার্বদৈহিক বৈশিষ্ট বিবেচনা করে গঠনগতভাবে (constitutional)নিখুঁত রোগীচিত্র তৈরীর মাধ্যমে সঠিক ওষুধ নির্বাচনের রোগারোগ্য সম্ভব । বিশেষভাবে, বৈচিত্রময় চোখের সমস্যার জন্য সুন্দর ফলাফল পেতে নিম্নে কয়েকটি ওষুধের লক্ষণের সঙ্গে পরিচিত করা আবশ্যক মনে করছি।
এখানে চোখের সমস্যার জন্য শীর্ষ ১০টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের তালিকা দেওয়া হল-
(১) Euphrasia -
- তীব্র(Acute) শ্লেষ্মা(catarrhal) নেত্রপ্রদাহ ।
- চোখ ঘন ঘন পানি আসে এবং চোখ মিটমিট করার প্রবণতা থাকে ।
- চোখ থেকে জ্বালাকর স্রাব বের হয়, যাতে চোখের পাতার প্রান্তে ক্ষত হয়ে যায়।
- কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার সাথে জ্বালাকর ঘন স্রাব নিঃস্বরণ হয়।
- কর্নিয়ায় ফুস্কুড়ি বা স্ফুটক হয়।
- বাতজনিত কারণে চোখের আইরিস প্রদাহসহ আংশিকভাবে চোখের পাতা প্যারালাইসিস (ptosis) এর ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে ভাল একটি অষুধ।
- প্রায় সবসময়ই চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরতেই থাকে।
- চোখের পাতা ফোলাসহ জ্বলা থাকে, যা খোলা বাতাসে ভাল অনুভব করে।
- সন্ধ্যায়, গৃহমধ্যে , আলো, উষ্ণতায় বৃদ্ধি।
- মুক্ত বাতাস , কফি পানে, অন্ধকারে হ্রাস পায়।
- নেত্রপ্রদাহ সঙ্গে যুক্ত এলার্জিক রাইনাইটিস এর ক্ষেত্রে চোখ ও নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরাকে এলিয়াম সেপা (Allium cepa) সঙ্গে তুলনা করা যায়।
(২) Ambrosia -
- এলার্জিজনিত চোখের সমস্যা।
- চোখের পাতায় অসহনীয় চুলকানি।
- চোখে হালকা ব্যথা এবং জ্বলাসহ পানি ঝরতে পারে এবং নাক থেকে রক্ত আসতে পারে।
- প্রায় সবসময় চোখের সমস্যার সঙ্গে বুকে সাঁইসাঁই শব্দসহ কাশি থাকে।
- স্যাবাডিলা (Sabadilla), আরন্ডো (Arundo) সঙ্গে তুলনা করা যায়।
(৩) Ruta -
- চোখ টনটনানিসহ মাথাব্যথা।
- চোখে ব্যথাসহ লালচে গরম পানি আসে।
- বিশেষ করে সূক্ষ্ম মুদ্রণ সেলাই বা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত।
- দৃষ্টিশক্তির সামঞ্জস্যের সমস্যা।
- মাথা ব্যাথা সঙ্গে চোখ শ্রান্তি।
- চোখের যন্ত্রণার সঙ্গে যুক্ত অত্যধিক দুর্বলতা (lassitude)।
- চোখের উপর থেতলানো মত এবং চাপ অনুভূতি।
- নেট্রাম মিউর (Natrum mur), আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum nitricum) এর সঙ্গে তুলনীয়।
(৫) Pulsatilla -
- পালসেটিলা চোখের যন্ত্রণার জন্য হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে অমূল্য একটি ওষুধ।
- চোখ থেকে অহেজাকর, ঘন, হলদে এবং সবুজাভ স্রাব নিঃস্বরণে এটিকে মনে রাখা উচিত।
- চুলকানি এবং জ্বালা অনুভুতি এর সঙ্গে যুক্ত।
- পৌনঃপুনিক অঞ্জনীতে ওষুধ সেবনকালীন অবশ্যই Pulsatilla এর একটি ডোজ প্রয়োজন।
- চোখের উপর পাতায় প্রদাহিত শক্ত গুটি থাকতে পারে।
- তীব্র নেত্রপ্রদাহের সাথে হজমজনিত সমস্যা থাকে।
- লক্ষণ সর্বদাই পরিবর্তনশীল, সেটা রোগজ হোক আর মানসিক হোক।
- স্কন্ধ এর শিরা বৃহদাকার।
- সব সমস্যা উষ্ণ রুমে খারাপ এবং খোলা বাতাসে ভাল।
(৫) Spigelia -
- চোখে স্নায়ুবিক যন্ত্রনা।
- চেপে ধরা মত ব্যথা যা এদেরকে ঘুরিয়ে ফেলে।
- চরম আলোকাতঙ্ক থাকে।
- গাঁটের ফোলা ও ব্যথাসহ চোখের প্রদাহ।
- চোখের মধ্যে গভীরে এবং চোখের চারপাশে ব্যাথা অনুভব অর্থাৎ চোখের বলে চাপ দেওয়া মত অসহ্য যন্ত্রনা।
- চোখের কোটরের অনুপাতে চোখ খুব বড় মনে হয়।
- স্পর্শে অত্যন্ত সংবেদনশীল, মাথার চারপাশে শক্ত বন্ধনী দেওয়া আছে মনে হয়।
- স্পর্শ, উত্তেজনা, গোলমাল বা কোলাহলপুর্ণ পরিবেশে এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি।
- মাথা উচু করে শুয়ে থাকলে ভাল অনুভব করে।
(৬) Apis mellifica -
- জ্বালাযুক্ত ও চুলকানিসহ ফোলা এবং নিচের পাতায় শোথ ( উপরের পাতায়- কেলি কার্ব)।
- চোখ উজ্জ্বল লাল ফোলা থাকে।
- অঞ্জনীর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে।
- অক্ষিগোলকে ব্যথাসহ পাতলা তরল নিঃস্বরণ হয়।
- শোথ থাকে কিন্তু পিপাসাহীন ( শোথ কিন্তু পিপাসা থাকে-এপোসাইনাম, এসেটিক এসিড)।
- প্রস্রাবে সমস্যার সাথে চোখের সমস্যা থাকে।
- তাপ , স্পর্শ , চাপ, ডান দিকে বৃদ্ধি।
- ঠান্ডা পানিতে ধোওয়া , মুক্ত বায়ুতে হ্রাস।
(৭) Merc Sol -
- উপদংশ (Syphilis) রোগী চোখের সমস্যা।
- চোখের পাতা মোটা , লাল, ফোলা।
- প্রচুর জ্বলন্ত হেজাকর স্রাব নিঃস্বরণ।
- অগ্নি ইত্যাদি একদৃষ্টি মরেছে পরে আরম্ভ চোখের সমস্যা।
- আইরিস প্রদাহসহ ঘন হেজাকর নিঃস্বরণ হয়।
- অত্যন্ত গন্ধযুক্ত চোখের স্রাব নিঃস্বরণ।
- চোখে এবং এর চারপাশে ফুড়া হয় যা থেকে হলুদ পূঁজ বের হয়।
- রাতে, ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, উষ্ণতায় বৃদ্ধি।
(৮) Silica -
- দিনের আলো চোখে ধারালো( Sharp) ব্যথা উৎপন্ন করে।
- চোখ বন্ধ বা চাপ প্রয়োগ করলে স্পর্শানুভুতি আরোও বেড়ে যায়।
- চোখের অগ্র অংশে পূঁজ তৈরী হয়, আইরিশ প্রদাহ।
- পড়ার সময় দৃষ্টি বিভ্রান্তের জন্য- সাজানো অক্ষরগুলো দৌড়াচ্ছে মনে হয়।
- চোখের পানিবাহিত (Lachrymal) নালী আক্রান্ত হয়।
- হোমিওপ্যাথিকভাবে নির্দেশিত হলে এটি কর্নিয়ার অস্বচ্ছতার পরিষ্কার করে।
- অফিসে কর্মীদের মধ্যে চোখের ছানি।
- অমাবস্যা , ঠান্ডা বৃদ্ধি।
- উষ্ণতায় হ্রাস পায়।
(৯) Hepar sulph -
- কর্নিয়ার ক্ষত।
- পূঁজযুক্ত চোখের সমস্যা , আইরিস প্রদাহসহ অগ্র স্তরে বা কক্ষে পূঁজ।
- নেত্রপ্রদাহ(Conjunctivitis) সঙ্গে পূঁজপুর্ণ নিঃস্বরণ।
- চোখের পাতা এবং কঞ্জাংটিভাতে লাল এবং প্রদাহ হয়।
- অক্ষিগোলকে ব্যথা।
- চোখের অক্ষিকোটর (eyeballs) ক্ষতবদ বেদনা (Soreness)।
- বস্তুসমূহ লাল এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত প্রদর্শিত হয়।
- দৃষ্টিক্ষেত্র অর্ধ-হ্রাস পায়।
- ব্যথা এবং পূঁজসহ অঞ্জনী।
- ঠান্ডা, স্পর্শ, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি।
- উষ্ণতা , মাথা আবৃত রাখলে হ্রাস পায়।
(১০) Agaricus -
- চোখের সামনে ফুল্কি উড়ার সঙ্গে দ্বিত্ব দৃষ্টি।
- চোখের পাতা এবং অক্ষিগোলক এর ঝাঁকুনি ( Twitching)।
- স্নায়ুতন্ত্রের বেদনাসহ (Neuralgic) চোখের যন্ত্রনা।
- পড়ার সময় অক্ষরগুলো নড়াচড়া করে, সাঁতার কাটছে বলে মনে হয়।
- চোখের পাতার ভিতর প্রান্ত লালচে ও প্রদাহ, জ্বালাকর ব্যথা, প্রান্ত শক্ত গুটির মত।
- চোখের যন্ত্রণা মাথাঘূর্নণ এবং বরফতুল্য ঠান্ডা মাথার সঙ্গে যুক্ত।
- খোলা ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি।