কোষ্ঠ্যকাঠিন্য এবং হোমিওপ্যাথি
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যঃ
পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় হয়, তখন একে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
 |
Constipation and Homeopathy |
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ
* আঁশজাতীয় খাবার ও শাকসবজি এবং ফলমূল কম খেলে
* পানি কম পান করলে
* দুশ্চিন্তা করলে
* কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে
* অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে
* ডায়াবেটিস হলে
* মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের হলে এবং মস্তিষ্কে টিউমার হলে
* বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে অনেক দিন বিছানায় শুয়ে থাকলে
* বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমন
1. ব্যথার ওষুধ
2. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
3. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ
4. খিঁচুনির ওষুধ এবং
5. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। তাছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনি-জনিত অসুখ, স্নায়ুরজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনি বা বৃক্কের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা এবং থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
* শক্ত পায়খানা হওয়া
* পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা
* পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া
* অধিক সময় পায়খানায় বসে থাকার পরও পূর্ণতা না আসা
* মলদ্বারের আশপাশেসহ তলপেটে ব্যথা অনুভব করা এবং
* আঙুল অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য অবশ্যই বেশি করে শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও ফলমূল খেতে হবে
* বেশি করে পানি খেতে হবে
* দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে
* যারা সারাদিন বসে থেকে কাজ করেন তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
* কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরী করে এমন রোগের চিকিৎসা আগে করতে হবে।
সঠিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা করা না হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
* পায়খানা ধরে রাখার ( Control of evacuation ) ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে
* পাইলস
* এনাল ফিশার
* মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে ( Rectal prolapse )
* মানসিক রোগে ( Mental Disease ) আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে
* প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে
* অন্ত্রে ( Intestine ) প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে
* খাদ্যনালীতে ক্ষত বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
* কোলন ক্যান্সার ও মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যা সময়মতো চিকিৎসা করা না হলে অকাল মৃত্যুও হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন- সিরাপ, মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই যারা বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, তাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয় তাদের অবশ্যই উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসুবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেলে এবং গরুর মাংস, খাসির মাংস ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু কোষ্ঠ্যকাঠিন্য চিকিত্সা নয়, তার ভিতরগত কারণ ও স্বতন্ত্র ( Individual ) প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিত্সার জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ( Graduate ) এবং রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত ।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের চিকিত্সার সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ
আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম, অরাম মেট, অপিয়াম, আর্সেনিক এল্বাম, এলোমিনা, ব্রায়োনিয়া, ব্যারাইটা কার্ব, বার্বারিস ভাল্গারিস, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কলিনসোনিয়া, কার্সিনোসিনাম, কস্টিকাম, গ্রাফাইটিস, চেলিডোনিয়াম, হিপার সালফ, লাইকোপডিয়াম, নাক্স ভমিকা, নাক্স মস্কেটা, প্লাম্বাম, রাস টক্স, সেপিয়া, সাইলেসিয়া, হাইড্রাস্টিস, সালফার ইত্যাদি।