যতদিন ধরে মানুষের অস্তিত্ব আছে চুল পড়া সমস্যাও ততদিন ধরে আছে, এমনকি থাকবেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, অনেক রোগে ভোগে,অপারেশনের পর চুল পড়তেই পারে।
কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টি চুলের বেশী পড়লে বা টাক হলেই চিন্তার বিষয়।
 |
Hair Falling and its homeopathy treatment |
চুল পড়ার কারণঃ
*বংশগত প্রবণতা - পারিবারিক ইতিহাস চুল পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
*অটোইমিউন রোগ - SLE, Vitiligo বা স্বেত রোগ ইত্যাদির মত কিছু অটোইমিউন রোগের সঙ্গে চুল পড়ার সম্পর্ক আছে।
*হরমোন জনিত রোগ - এছাড়াও হরমোনের ব্যাঘাতে হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম মত রোগে এ অবস্থা হতে পারে।
*চর্ম রোগ - সোরিয়াসিস, একজিমা চর্ম প্রদাহের কারনে সাধারণভাবে চুল পড়তে পারে।
*উচ্চশক্তিসম্পন্ন বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে রোগের চিকিত্সা অথবা কেমোথেরাপি - ক্যান্সারের মত নির্দিষ্ট কিছু রোগে গুরুতর চুলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।
*পুষ্টির অভাব - পুষ্টির ঘাটতি যেমন লৌহ, ভিটামিন, দস্তার অভাবে চুল পড়ে।
*অত্যধিক আঁচড়ানো - এ কারনেও মাথা থেকে চুল পড়ে যেতে পারে।
*পোড়া - পোড়া চামড়ার যে কোন স্থানে চুলের ক্ষতি হয়।
*রজঃনিবৃতি কাল - রজঃনিবৃতি কালে মহিলাদের চুল পড়া খুবই সাধারণ ব্যপার।
*অন্যান্য কারণ - প্রধানত উচ্চ জ্বর, বড় সার্জারি, রক্তক্ষরণ, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ, অনাহার, রাসায়নিক পদার্থ, মূত্রাশয় কর্মহীনতা ইত্যাদি কারণে চুল পড়ে যেতে পারে।
প্রতিকার:
নিম্ন লিখিত খাবারগুলো নিয়মিত খেলে চুল পড়া কমতে পারে-
*গাঢ় সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে যাতে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই আছে যা natural conditionar হিসেবে কাজ করবে ।
*শিমের বিচি, মটর শুটি, বরবটি ইত্যাদ যা প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়াও আয়রণ, জিঙ্ক ও বায়োটিন আছে যা চুল ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
*কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোটও natural conditionar এর কাজ করে।
*খাবার তালিকায় প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন যেমন-মুরগী, ডিম রাখতে হবে।
*লাল চাল,লাল আটা খেতে হবে যাতে জিঙ্ক, আয়রণ ও ভিটামিন-বি পাওয়া যায়।
*কম চর্বি যুক্ত দুধে ক্যালসিয়াম আছে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশকীয় উপাদান।
*গাজর ভিটামিন-এ এর ভাল উৎস যা প্রতিদিন সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়।
*তিসি চুলের জন্য ভীষণ উপকারী।
*সূর্যমূখীর বীচি চুলকে মজবুত ও ঝলমলে করতে দারুন ভাবে কাজ করে।
পরীক্ষাগারে পরীক্ষাঃ
এটি প্রধানত বিস্তারিত মেডিকেল ইতিহাস, পুরো রক্ত গণনা, সিরাম আয়রন, রেনাল ফাংশন পরীক্ষা, থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা, লিভার ফাংশন পরীক্ষা, দূরবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।
চিকিৎসাঃ
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও সঠিক ঔষধ নির্বাচনের মাধ্যমে চিকিত্সার জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ও রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিম্নলিখিত ঔষধগুলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেক সহায়ক:
Thuja - সাদা আঁশযুক্ত খুশকি কারণে চুল পতনশীল।
Phosphorous - গুচ্ছাকারে চুলের পতন. এখানে -সেখানে চুল উঠে দাগ পড়ে যায়।
Acid Phos - বিষাদের কারণে চোখের ভ্রু থেকে, মাথা থেকে এবং যৌনাঙ্গ থেকে চুল পড়ে যেতে পারে।
Selenium - মাথার খুলি মসৃণ এবং কেশহীন রেখে পুরো মাথার চুল পড়ে যায়। ভ্রু থেকে চুল পড়ে এবং একটি অদ্ভুত চেহারা প্রদর্শিত হতে পারে।
Alumina - ব্যাপক হারে মাথার খুলির চুল পড়তে পারে।
Acid Fluor - সিফিলিসের কারণে চুল পড়ে। চুলগুলো শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল হয়, ফেটে যায় এবং পরিশেষে ভেঙে যায়। চুল ছিন্ন বা এলোমেলো হয়ে দিপ্তিহীন বা সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ে।
Natrum Mur - গর্ভাবস্থায় চুলের পতন। দীর্ঘস্থায়ী মাথা ব্যাথা, ক্লান্তিকর সমস্যার কারণে চুল পাকে ও পরে চুল পড়ে যায়।
Lachesis - গর্ভাবস্থায় চুলের পতন।
Borax - চুল রুক্ষ এবং ঝুঁটি বেঁধে যায় যা মসৃণভাবে আচঁড়ানো যায় না। এমনভাবে ঝুঁটি হয় শিং এর মত লাগে এবং যা গুচ্ছাকারে পড়ে।
Pulsatilla - এটি চুল পড়ার জন্য চমৎকার, যদি চুখে চুল আছে এমন অনুভুতি থাকে।
Nitric Acid - মাথার তালু থেকে অনেক চুল পড়ে এর সাথে ফুস্কুরিও থাকতে পারে। এটা সিফিলিস, স্নায়বিক মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতার কারণে হতে পারে। এতে মাথার খুলি খুব সংবেদনশীল থাকে।
Vinca Minor - মাথায় টাক দাগের সাথে ত্বকের চুলকানি ,আর্দ্রতা ও অনুজ্জল থাকে। মাথা চুলকাতেই হবে এমন লক্ষণ থাকবে।
Ammon Mur - চোখের ভ্রু থেকে চুলের পতন।
Rhus Tox - এতেও চুলের পতন আছে।।
Mercurius - সিফিলিসের কারণে চুলের পতন হবে।
Sulphur - খুব রুক্ষ চুলের সাথে যদি মাথার চুলকানি বিদ্যমান থাকে যা সমুদ্রের কাছে বাস করলে ভাল থাকে।
Sepia - মেনোপজ বা রজঃনিবৃতি কালে এবং গর্ভাবস্থায় চুলের পতন। মাথা ব্যাথার কারণে চুল পড়ে যায়। এদের দাম্পত্য জীবনে কোন বাসনা থাকেনা।
Medorrhinum - মাথার তালুর চুলকানির সঙ্গে চুলের পতন। সমুদ্রের দিকে বাস করলে ভাল থাকে।