বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। হার্টবার্ন বা পাইরোসিস বলতে গলা ও মুখের মধ্যে টক বা তিক্ত স্বাদসহ নিম্ন বুকে জ্বলা অনুভূতিকে বুঝানো হয়।
বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
বুকজ্বলাঃ
হার্টবার্ন বা পাইরোসিস বলতে গলা ও মুখের মধ্যে টক বা তিক্ত স্বাদসহ নিম্ন বুকে জ্বলা অনুভূতিকে বুঝানো হয়। সাধারণতঃ এটা প্রয়োজনাতিরিক্ত খাবার খেলে, বা শোয়ার সময় দেখা দেয়। জ্বলা অনুভূতি কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার জন্য স্থায়ী হতে পারে।
আসলে বুক জ্বলা (Heartburn) পরিপাক ত্বন্ত্রের খাদ্যনালীর রোগ, যাহাতে খাদ্য, পাকস্থলি অ্যাসিড (HCl), এবং পাচক এনজাইমের উল্টা প্রবাহ বা পাকস্থলি থেকে মুখের দিকের প্রবাহ।
এটা মূলত পাকস্থলি চারপাশের পেশী শিথিল হওয়ার কারণে যা ঘটে। বুকের ব্যথা, হৃদপিন্ডের ব্যথার (Angina) সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয় যদিও হৃদপিন্ডের ব্যথার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
বুকজ্বলা কিছু ঔষধ, ডায়াবেটিস, হায়াটাল হার্নিয়া এবং কিছু অটোইমিউন রোগের কারণেও হতে পারে।
বুকজ্বলা পুনঃপুন আক্রমন ঘটলে অনেক অস্বস্তি লাগতে পারে। বুকজ্বলার কারণে অন্ননালী এবং পাকস্থলি প্রদাহসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ লক্ষণ ঘন ঘন ফিরে আসলে এবং সঠিক চিকিৎসা না করা হলে কয়েক সপ্তাহ, মাস বা তার বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে ।
কারণসমূহঃ
- হায়াটাল হার্নিয়া (যখন পাকস্থলি উপর দিকে ডায়াফ্রামে চাপ দিতে থাকে তখন ডায়াফ্রামস্থিত পাকস্থলি মুখ [Hiatus] সরু হয়ে যায়, ফলে অন্ননালিতে হার্নিয়া দেখা দেয়)
- গর্ভকালীন সময়
- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের জন্য
- ভারি খাবার বা বেশি খাবার খাওয়ার জন্য
- অ্যালকোহল সেবনের জন্য
- চকলেট খাবার জন্য
- মসলাযুক্ত বা চর্বিজাতীয় খাবার জন্য
- কার্বনেটেড পানীয়র জন্য (Pepsi, RC, Coka-cola etc.)
- পিপারমেন্ট (Peppermint)
- ধূমপান
- খাবার পরেই ব্যায়াম করলে
- মানসিক চাপ (Stress)
- স্থূলতা (Obesity)
- খাবার পরপরই শোয়ে পড়লে
লক্ষণঃ
- বুকে ব্যথা
- গলা ব্যথা
- নিম্ন বুকে জ্বলা
- পাকস্থলিতে অস্বস্তি
- পাকস্থলি থেকে খাবার, পাকস্থলি অ্যাসিড (HCl), এবং পাচক এনজাইমের উল্টা প্রবাহ, বা পাকস্থলি থেকে মুখের দিকের প্রবাহ (Reflux)।
- গলা ও মুখের মধ্যে টক বা অ্যাসিড স্বাদ
অন্তর্ভুক্ত কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ
- গলায় ক্ষত (Sore throat)
- ল্যারিংস প্রদাহ (Laryngitis)
- বুকে সাঁই সাঁই শব্দ (Wheezing)
- নিউমোনিয়া
- মাড়ি প্রদাহ (Gingivitis)
- শ্বাসে দুর্গন্ধ (Bad breath)
- কান ব্যথা (Earache)
বুকজ্বলার প্রতিকারঃ
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে (কমপক্ষে ৩লিটার)
- খাবার সময় পানি পান না করাই ভাল। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে আধা ঘন্টা পানি পান করা ভাল।
- খাবার আস্তে আস্তে চিবিয়ে খেতে হবে যাতে লালার সাথে ভালভাবে মিশতে পারে।
- সকালে খালিপেটে কমপক্ষে চারগ্লাস পানি পান করা উত্তম।
- ধুমপান ত্যাগ করা উচিত।
- বেশি চা পান না করা।
এছাড়াও উপরুল্লিখিত কারণগুলো থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
বুকজ্বলার পরীক্ষাঃ
- Esophagioscopy and Gastroscopy- ক্ষত নির্ণয়ের জন্য।
- Esophageal manomatric studies- খাদ্যনালী রিফ্লাক্স নির্ণয়ের জন্য।
- Acid barium swallows- খাদ্যনালীর প্রদাহ নির্ণয়ের জন্য।
- Ambulatory ph monitoring
বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি ওষুধ সবচেয়ে জনপ্রিয় রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাই নয়, রোগের অন্তর্নিহিত কারণ এবং স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে।
স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিৎসার জন্য, রোগীকে অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন ও রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ
ইপিকাকঃ
বুকজ্বলার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি ও অত্যধিক বায়ু নির্গত হয়। এটি গর্ভাবস্থাতেও খুবই উপযুক্ত।
নাক্স ভমিকাঃ
বুকজ্বলা এবং বায়ু নির্গতসহ অনেক অম্লতা, এতে বমি বমি ভাব এবং বমি থাকবে না। জিহ্বা মাখনের মতো স্তর দিয়ে আবৃত থাকে, পাকস্থলি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়।
ক্যাল্কেরিয়া কার্বঃ
পাকস্থলিতে জ্বলা অনুভূতি থাকে; পাকস্থলিতে অনেক চাপবোধসহ খাদ্য ও শ্লেষ্মা বমি করে।
স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়াঃ
ধূমপান দ্বারা ঘঠিত বুকেরজ্বলা।
আর্সেনিক অ্যালবামঃ
নোংরা বা অম্লস্বাদ, অন্ননালী এবং ফেরিংস গরম জ্বলা অনুভূতি; টক, তীব্র গন্ধযুক্ত তরল, বমি বমি ভাব,টক ঢেঁকুর এবং শ্লেষ্মা বমি। অনিয়মিত এবং দ্রুত পালস,হাত পা কাঁপে ও ঠান্ডা হয়ে যায় সাথে পাকস্থলিতে ব্যথাসহ দুশ্চিন্তা।
চায়নাঃ
পেটে অস্বস্তি শুধুমাত্র ঢেঁকুর দ্বারা অব্যাহতি পায়। টক এবং তিক্ত ঢেঁকুর বা দুর্গন্ধ বায়ু, রাতে এবং রাতে খাওয়ার পর বাড়ে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
এই মেডিসিনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল- পেটে মধ্যে দীর্ঘ সময় খাবার থাকার পরও হজম না হয়ে ঢেঁকুর উঠে এবং পরিশেষে খাদ্যবমি হয়।
ন্যাট্রাম ফসঃ
হাইপার এসিডিটি, ঘামে টক গন্ধ, বমি বমি ভাব এবং তীব্র গন্ধযুক্ত বমি। টক ঢেঁকুর, ভিনেগারের মত টক তরল বমি। টক ঢেঁকুরের সাথে পাকস্থলির ক্ষত।
বুকজ্বলায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় আরোও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নিম্নরুপঃ
পালসেটিলাঃ
শুকনা মুখ,সকালে মুখে দুর্গন্ধ থাকে মনে হয় গলা অবধি খাবার জমে আছে। পুরু এলোমেলো সাদা স্তরযুক্ত জিহবা; অম্লতা এবং বুকজ্বলা এর নির্দেশিত লক্ষণ। খবারের স্বাদ তিক্ত , তিক্ত বা টক ঢেঁকুর; তৃষ্ণা নেই, কিন্তু বারবার মুখ ভেজায়।
খাবারে খারাপ স্বাদ পালসেটিলার বিশেষ ইঙ্গিত দেয়। এটা প্যাস্ট্রি বা মিশ্র খাদ্য থেকে, চর্বিযুক্ত খাবার, শুয়োরের মাংস থেকে বেশি হয়। রোগীর শীতকাতর, কিন্তু তাপে এবং সন্ধ্যায় বাড়ে।
ফসফরাসঃ
পেটজ্বলা এবং পাকস্থলি জ্বলতেই থাকে, খাদ্য বমি, বমি বমি ভাব ছাড়া রক্তবমি, যত তাড়াতাড়ি পেট গরম হয়, তত তাড়াতাড়ি বমি হয় যা ঠান্ডা খাদ্যের জন্য ক্ষুধিত থাকে।
পেট দুর্বল অনুভূতি হাতের পাখনার নিচেও জ্বলা,পেট খালি এবং পাকস্থলি দুর্বল থাকে।
ধ্বংসাত্বক এবং ক্ষয়ে বিশেষ সম্পর্ক আছে, তাই এটা জ্বলন্ত, প্রচন্ড ব্যথাসহ হয় ক্যান্সার, শক্ত গ্রন্থি, ক্ষতে। মাংস দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
এস্কিউলাস হিপঃ
ঢেঁকুরে শুধু বাতাস; বুকজ্বলা, অনেক জ্বলন্ত মর্মপীড়া, পাকস্থলির মধ্যে পাথর চাপ অনুভূতি থাকে।
ফেরাম মেটঃ
খানাপিনার পরপরই বুকজ্বলা এবং বমির জন্য অসাধারণ ওষুধ।
COMMENTS